Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

Thursday, February 12, 2015

বাচাঁর উপায় গীবত থেকে


ইসলামে কাবিরাগুনাহর (বড়) মধ্যে একটি হলো গীবত করা । আর গীবত করার মানে অন্যের দোষ ত্রুটি তাঁর অনুপস্তিতিতে অন্য কারো কাছে বর্ননা করা । মানুষের দোষ ত্রুটি থাকতেই পারে আর তাই তো সংশধনের জন্যে রয়েছে তাকে সামনাসামনি বলে ভুল গুলো ধরিয়ে দেয়া । তাহলে একজন মানুষকে প্রকৃত মানুষ হয়ে সমাজে থাকা সহজ হবে । আর গীবত খুব মারাত্তক একটি অপরাধ ইসলামের দৃষ্টিতে । ইসলামে যা কিছু নিষেধ করা হয়ে তা মানবতার কল্যানের জন্যে ।গীবতের নানা বিধ ক্ষতিকর দিক গুলো আজ সামাজে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে । সমস্ত ঝগড়া বিবাদ , মারামারি , হানাহানি সহ অসংখ্য সমস্যার দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় তাঁর মুল কারন অনেক সময় এই গীবত । মহান রব্বুল আলামীন কঠোর ভাবে এই গীবত করা থেকে বিরত থাকতে আমাদের নিষেধ করেছেন । প্রিয়নবী (সাঃ) তাঁর হাদীসের মধ্যে তা থেকে বিরত থাকার জন্য বলেছেন এবং তা থেকে বাচার সমস্ত পন্থা বলে দিয়েছেন ।
মহান আল্লাহ গীবত সম্পর্কে বলেছে :
মুমিনগণ, তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ। এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তারা মৃত ভ্রাতার মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুতঃ তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু। ( ৪৯ :১২ )
যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তার পিছনে পড়ো না। নিশ্চয় কান, চক্ষু ও অন্তঃকরণ এদের প্রত্যেকটিই জিজ্ঞাসিত হবে।  ( ১৭ :৩৬ )   ।সে যে কথাই উচ্চারণ করে, তাই গ্রহণ করার জন্যে তার কাছে সদা প্রস্তুত প্রহরী রয়েছে। ( ৫০ : ১৮ ) রিয়াযুস স্বা-লিহীন :: বই ১৮ :: হাদিস ১৫১১
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) গীবতের শাস্তি হিসেবে বলেছেন, হযরত আনাস (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ্(সা) বলেনঃ যখন আমাকে মিরাজে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল আমি এমন এক দল লোকের সামনে দিয়ে অতিক্রম করলাম, যাদের নখগুলো ছিল আমার। তারা নখ দিয়ে নিজেদের মুখমন্ডল ও বক্ষদেশ খামচাচ্ছিল। আমি বললাম, হে জিবরীল! এরা কারা? তিনি বলেন, এরা মানুষের গোশত খেত এবং তাদের মান-ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি খেলত।
হযরত আবু হুরাইরা (রা) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ্(সা) বলেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন কল্যাণময় কথা বলে কিংবা নিরব থাকে। (বুখারী ও মুসলিম) এ প্রসঙ্গে এই হাদীসও সুস্পষ্ট, কেউ যেন কল্যাণময় কথা ছাড়া অন্য কথা না বলে। যে কথার যৌক্তিকতা সুস্পষ্ট হলেও তাতে কিছু সন্দেহ রয়েছে সে কথাও যেন কেউ না বলে।
হযরত আবু মূসা (রা) বর্ণনা করেন, আমি নিবেদন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! মুসলমানদের মধ্যে কে উত্তম? তিনি বলেন; যার মুখ ও হাত থেকে অপর মুসলমান নিরাপদ থাকে। (বুখারী ও মুসলিম)হযরত সাহাল বিন সা’দ (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ্(সা) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমাকে তার উভয় উরুর মধ্যবর্তী (যৌনাঙ্গ) বস্তুটি সম্পর্কে নিশ্চয়তা দেবে, আমি তাকে জান্নাতের ব্যাপারে নিশ্চয়তা দেব। (বুখারী ও মুসলিম)
হযরত আবু হুরায়রা (রা) বর্ণনা করেন, তিনি রাসূলুল্লাহ্(সা) কে বলতে শুনেছেন; বান্দাহ একটি কথা বলে, যে ব্যাপরে সে কিছু চিন্তা করেনা। এ কারণে সে পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যবর্তী দূরত্বের চেয়েও বেশি দূরত্বে দোযখে চলে যায়। (বুখারী ও মুসলিম)তাবাইয়্যান শব্দের অর্থ সে চিন্তা করে যে, কাজটি ভাল কি মন্দ।
হযরত আবু হুরাইরা বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ্(সা) বলেছেন, একটি লোক আল্লাহ্র সন্তুষ্টির কথা বলে কিন্তু সে বিষয়ের ওপর খুব বেশি গুরুত্ব আরোপ করে না। এর কারণে আল্লাহ্ তার মর্যাদাকে উন্নত করবেন। অপর এক ব্যক্তি আল্লাহ্র অসন্তুষ্টির কথা বলে এবং সেটাকে মামুলি বলে মনে করে। এ কারণে লোকটি জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। (বুখারী)হযরত আবদুর রহমান বিলাল ইবনে হারিস মুযান্নী (রা) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ্(সা) বলেছেন, এক ব্যক্তি আল্লাহ্র সন্তুষ্টির কথা বলে তবে সে খেয়াল করেনা যে,এটা তাকে কতখানি উচ্চ মর্যাদায় নিয়ে যাবে। আল্লাহ তার জন্যে কেয়ামত পর্যন্ত তাঁর সন্তুষ্টি বহাল রাখেন। অপর এক ব্যক্তি আল্লাহ্র অসন্তুষ্টির, কথা বলে। তার খেয়াল থাকে না যে, সে এই বিষয়টিকে এতটা নিচে নামিয়ে ফেলবে। আল্লাহ্তার জন্যে কেয়ামত পর্যন্ত অসন্তুষ্টি বহাল রাখবেন।
হযরত সুফিয়ান ইবনে আবদুল্লাহ (রা) বর্ণনা করেন, আমি নিবেদন করলাম; হে আল্লাহ্র রাসূল! আপনি আমায় এমন কথা বলুন যাকে আমি দৃঢ়তার সাথে আঁকড়ে ধরবো। রাসূলুল্লাহ্(সা)  বলেন, তুমি বলোঃ “আমার রব্ব আল্লাহ” অতপর এর ওপর দৃঢ়তা অবলম্বন কর। আমি আবার নিবেদন করলাম, হে আল্লাহ্র রাসূল! আপনি আমার ব্যাপারে কোন জিনিসটিকে বেশি ভয় করেন? রাসূলুল্লাহ্(সা) নিজের জিহবাকে ধরে বললেনঃ এই জিনিসটি। (তিরমিযী)
হযরত ইবনে উমর (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ্(সা) বলেছেনঃ আল্লাহর যিকির ছাড়া বেশি কথা বলোনা। এই কারণে যে, আল্লাহ যিকির ছাড়া কথা মনের ভিতর কাঠিন্য সৃষ্টি করে। আর আল্লাহ্র থেকে সেই ব্যক্তি বেশি দূরে থাকবে, যার অন্তরে কাঠিন্য সৃষ্টি হবে। (তিরমিযী)
হযরত আবু হুরাইরা (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ্(সা) বলেছেন, যে ব্যক্তিকে আল্লাহ দু’টি কাজের অনিষ্ট- তার মুখের কথার অনিষ্ট এবং তার দু’পায়ের মধ্যবর্তী স্থানের (অর্থাৎ তার লজ্জাস্থানের) অনিষ্ঠ থেকে সুরক্ষিত রেখেছেন, সে জান্নাতে দাখিল হবে। (তিরমিযী)
হযরত উকবা বিন্আমের (রা) বর্ণনা করেন, আমি নিবেদন করলামঃ হে আল্লাহ্র রাসূল! পরকালীন নাজাত কিভাবে অর্জন করা যেতে পারে? তিনি বললেনঃ নিজের জিহ্বাকে সংযত রাখো এবং নিজের ঘরে অবস্থান করো। আর নিজের ভুল-ক্রটির জন্য (আল্লাহ্র কাছে) কান্নাকাটি করো। (তিরমিযী)
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ্(সা) বর্ণনা করেছেনঃ আদম সন্তান যখন সকালে ঘুম থেকে উঠে তখন তার সকাল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জবানের সামনে বিনীতভাবে বলেঃ আমাদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো এই জন্যে যে, আমরা তোমার সঙ্গে রয়েছি। তোমরা যদি সঠিক থাকো তাহলে আমরাও সঠিক থাকবো। আর তোমরা যদি বক্রতার আশ্রয় নাও, তাহলে আমরাও বাঁকা হয়ে যাবো। (তিরমিযী)
হযরত মা’আয (রা) বর্ণনা করেন, আমি নিবেদন করলামঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমায় এমন কোনো আমল বলে দিন, যা আমায় জান্নাতে প্রবেশ করাবে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে। তিনি বললেনঃ তুমি বিরাট আমলের ব্যাপারে প্রশ্ন করেছো। তবে আল্লাহকে যাকে তওফিক দান করেন, তার পক্ষে এটা খুবই সহজ। (তোমার প্রশ্নের জবাব হলো) আল্লাহর বন্দেগী করো। তার সঙ্গে কাউকে শরীক করোনা। নামায কায়েম করো, যাকাত আদায় করো, (রমযানের) রোযা রাখো, আর সামর্থ্য নথাকলে বায়তুল্লাহতে হজ্জ করো। এরপর তিনি বললেনঃ আমি কি তোমায় নেকীর সমস্ত দরজার কথা বলবোনা? স্মরণ রেখো, রোযা ঢাল স্বরূপ। দান-সাদকা (ছোটখাটো) পাপগুলোকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়, যেমন পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয়। আর লোকদের অর্ধেক রাতের সময় নামায পড়াও একটি ভালো কাজ। এরপর তিনি আয়াতটি পড়লেনঃ
“তাদের পার্শ্বদেশ বিছানা থেকে ধুরে থাকে। তারা নিজেদের প্রভুকে ডাকে ভয় ও আশা সহকারে এবং আমি তাদের যা কিছু রিযিক দিয়েছি তা থেকে খরচ করে। তাদের কাজের প্রতিদানস্বরূপ তাদের জন্য চোখ শীতলকারী যেসব সামগ্রী গোপন রাখা হয়েছে,প্রাণীই তা জানে না” (সূরা আস্-সাজদাঃ১৬-১৭)
তারপর বললেনঃ আমি কি তোমায় দ্বীনের মূল ভিত্তি স্তম্ভগুলো এবং সেগুলোর উচ্চতা সম্পর্কে অবহিত করবো না? আমি নিবেদন করলাম; অবশ্যই হে আল্লাহ্র রাসূল! তিনি বললেনঃ দ্বীনের মূল ভিত্তি হলো, ইসলামের প্রতি ঈমান পোষন। তার স্তম্ভগুলো হলো নামায। তার উচ্চতা হলো জিহাদ। এরপর তিনি বললেনঃ আমি কি তোমায় এমন জিনিসের কথা বলবোনা, যার ওপর ওই সবকিছুর অস্তিত্ব নির্ভরশীল? আমি নিবেদন করলাম অবশ্যই, হে আল্লাহ্র রাসূল! অতঃপর তিনি নিজের জিহ্বার অগ্রভাগ ধরে বললেন, একে বন্ধ রাখো। আমি নিবেদন করলামঃ হে আল্লাহ্র রাসূল! আমরা যে লোকদের সাথে কথা বলি, সে সম্পর্কে আমদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে? তিনি বললেনঃ তোমার মা তোমার জন্য দুঃখ ভারাক্রান্ত হোক। লোকদের তাদের চেহারার দরুন নয়, বরং জিহ্বার কারণে দোযখে নিক্ষেপ করা হবে। (তিরমিযী)( রিয়াযুস স্বা-লিহীন :: বই ১৮ :: হাদিস ১৫২৩)
হযরত আবু হুরাইরা (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ্(সা) বলেছেনঃ তোমরা কি জানো গীবত কি জিনিস? সাহাবাগণ বললেনঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তিনি বললেনঃ তোমার আপন (মুসলমান) ভাই সম্পর্কে এমন কথা বলা যাকে সে অপ্রিতিকর মনে করে। জিজ্ঞেস করা হলো আপনি বলুন, আমি যা কিছু বলছি তা যদি আমার মধ্যে বর্তমান থাকে তাহলে? তুমি যা কিছু বলছো, তা যদি তার মধ্যে বর্তমান থাকে, তবে তো তুমি গীবত করলে। আর যদি তার মধ্যে সেটা না থাকে, তাহলে তুমি ‘বুহ্তান’ করলে। (মুসলিম)
হযরত আবু বকর (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ্(সা) বিদায় হজ্জে কুরবানীর দিন মিনায় খুতবা দান প্রসঙ্গে বলেনঃ নিঃসন্দেহে তোমাদের রক্ত তোমাদের সম্পদ ও তোমাদের সম্মান তোমাদের পরস্পরের প্রতি ‘হারাম’ (সম্মানার্হ) যেমন তোমাদের এই দিন তোমাদের এই মাস এবং তোমাদের এই শহর সম্মানাই। সাবধান! আমি কি তোমাদের পৌঁছে দিয়েছি? (বুখারী ও মুসলিম)
হযরত আয়েশা (রা) বর্ণনা করেন, আমি রাসূলুল্লাহ্(সা) এর কাছে নিবেদন করলামঃ সাফিয়া (রা) এর ব্যাপারে আপনার অমুক অমুক জিনিসই যথেষ্ট। কোন কোন বর্ণনাকারী বলেন, তার দৈহিক আকৃতি ছিলো খাটো। (একথা শুনে) রাসূলুল্লাহ্(সা)  বললেনঃ তুমি এমন একটি কথা বললে যে, একে সমুদ্রের পানির সাথে মিশিয়ে দেয়া হলে তার পানির ওপর প্রাধান্য লাভ করবে। হযরত আয়েশা (রা) বর্ণনা করেন, আমি রাসূলুল্লাহ্(সা)  এর সামনে এক ব্যক্তির অনুকরণ করলাম। তিনি বললেনঃ আমি কারো অনুকরণ করাকে পছন্দ করিন না। এর জন্যে যদি আমায় বিপুল পরিমাণ ধন-মাল দেয়া হয়, তবুও নয়। (আবু দাঊদ, তিরমিযী)।
হাদীসে উল্লেখিত ‘মাযাজাত্হু’ শব্দের অর্থ হলোঃ সে তার সাথে এমনভাবে মিশে গেল যে, মিশ্রিত জিনিসের দুর্গন্ধ ও নষ্ট হওয়ার কারণে তার স্বাদ ও সুগন্ধি বদলে গেছে। এই হাদীসটি গীবতকে কার্যকরভাবে প্রতিরোধ করে। আল্লাহ্র হুকুম মাত্র, যা তার প্রতি প্রেরণ করা হয়।
আল্লাহ আমাদের এই ভয়াবহ গীবত থেকে রক্ষা করো ,তোমার দেখানো পথে চলার সুযোগ দাও।আমীন

Post Top Ad

Your Ad Spot

প্রয়োজনীয়