Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

Thursday, August 28, 2014

রহস্যময় জ্বিন



রহস্যময় জ্বিন এবং ভাগ্য গননা

মূলঃ ড. আবূ আমীনাহ বিলাল ফিলিপস্
ভাষান্তরঃ ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মাদ হাসান

———————————-
( নোট: ড. আবূ আমীনাহ বিলাল ফিলিপস্ একজন বিশ্বখ্যাত দা’য়ী এবং ধর্মান্তরিত মুসলিম)
সৌজন্যে: মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী

 

#জ্বিনদের সাথে গণকদের একবার যোগাযোগ ও চুক্তি সম্পন্ন হলে ভবিষ্যতে ঘটবে এমন কিছু ঘটনা সম্পর্কে জ্বিন তার অনুসারী গণকদের জানাতে পারে।
#রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, “তিন শ্রেণীর জ্বিন রয়েছে। এক প্রকার জ্বিন সারাক্ষণ আকাশে উড়ে বেড়ায়, দ্বিতীয় প্রকার জ্বিনেরা সাপ ও কুকুর হিসাবে বিদ্যমান, তৃতীয় প্রকার জ্বিন পৃথিবী অভিমুখে অগ্রসরমান তথা পৃথিবীতে অবস্থান করে এবং এরা এক জায়গায় বসবাস করা সত্ত্বেও এখানে সেখানে উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘোরাফেরা করে।
#অবিশ্বাসী জ্বিনদেরকে বিভিন্ন নামে আরবীতে ও বাংলাতে উল্লেখ করা হয়ঃ ইফরীত, শয়তান, ক্বারীন, দৈত্য, পিশাচ, অপদেবতা, ভূত, পেত্নী, প্রেতাত্মা ইত্যাদি।
#রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, “আমার সালাত ভাঙ্গার জন্য গতরাতে জ্বিনদের মধ্য হতে এক ইফরীত* থু থু নিক্ষেপ করেছিল।
#১৯৮০ সালে প্রচারিত ও প্রকাশিত বিভিন্ন প্রকার ভবিষ্যদ্বাণীর উপর পরিচালিত এক গবেষণা জরিপে দেখা যায়, সবচেয়ে নির্ভুল ভবিষ্যদ্বাণীর মাত্র ২৪% সঠিক হয়েছিল!
#যদি কেউ কোন গণক, গায়বী বিষয়ের সংবাদদাতা বা ভবিষ্যদ্বক্তার নিকট গমন করে তাকে কিছু জিজ্ঞেস করে তবে ৪০ দিবস পর্যন্ত তার কোন সালাত কবুল হবে না’।

____________________________________________________________________________________


মানুষের মধ্যে যেসব লোক অদৃশ্য ও ভবিষ্যত সম্বন্ধে জ্ঞানের অধিকারী বলে দাবী করে তারা বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন- গণক, ভবিষ্যদ্বক্তা, যাদুকর, ভবিষ্যৎদ্রষ্টা, জ্যোতিষী, হস্তরেখা বিশারদ প্রভৃতি। এসব ভবিষ্যদ্বক্তা নানা পদ্ধতি ও মাধ্যম ব্যবহার করে তথ্যাবলী উপস্থাপন করার দাবী করে থাকে। পদ্ধতিগুলোর মধ্যে রয়েছে- চায়ের পাতা পড়া, নানা প্রকার রেখা ও নকশা আঁকা, সংখ্যা লেখা, হাতের তালুর রেখা পড়া, রাশিচক্র খুঁটিয়ে দেখা, স্ফটিক বলের প্রতি স্থির দৃষ্টিপাত করা, হাড় দিয়ে খটর খটর বা ঝনঝন করানো, লাঠি ছোঁড়া ইত্যাদি। আলোচ্য প্রবন্ধে ভাগ্য গণনার নানাবিধ কলা-কৌশল ও এর শারঈ ভিত্তি নিয়ে আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ্।
অদৃশ্য প্রকাশে ও ভবিষ্যদ্বাণী করতে সক্ষম হওয়ার দাবীদার জ্যোতিষীদেরকে প্রধানত দু’ভাগে বিভক্ত করা যায়।
১. প্রথমতঃ ঐসব জ্যোতিষী যাদের প্রকৃতপক্ষে কোন সত্য জ্ঞান বা গুপ্ত রহস্য জানা নেই; বরং তারা তাদের নিকট আগত লোকদেরকে তাই বলে, যা সাধারণত অধিকাংশ লোকের ক্ষেত্রে সচরাচর ঘটে থাকে। তারা প্রায় সময়ই অর্থহীন কিছু ধর্মীয় কর্মকান্ড সম্পন্ন করার মাধ্যমে পূর্বপরিকল্পিত সাধারণ অনুমান প্রকাশ করে থাকে। কখনো কখনো তাদের কিছু অনুমান অতি সাধারণতার জন্য সত্য হয়ে যায়। অতিসামান্য যে কয়েকটি ভবিষ্যদ্বাণী সত্য বলে প্রকাশ লাভ করে, অধিকাংশ মানুষের মধ্যে সেগুলো মনে রাখার প্রবনতা দেখা যায়; কিন্তু যেগুলো আদৌ সত্য বলে প্রকাশিত হয় না, তার বেশীরভাগই মানুষ খুব দ্রুত ভুলে যায়। প্রকৃত সত্য কথা হচ্ছে, কোন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যদি পুনরায় মনে না পড়ে, তাহলে কিছু দিন পরে সকল ভবিষ্যদ্বাণীর অর্ধেকই মানুষ অবচেতনভাবে ভুলে যায়। উদাহরণস্বরূপ, প্রতিটি নতুন বৎসরের শুরুতে আসন্ন বছরে মানুষের জীবনে সংঘটিতব্য ঘটনা সম্পর্কে বিভিন্ন খ্যাতিমান জ্যোতিষীদের নানা রকম ভবিষ্যদ্বাণী প্রকাশ করা উত্তর আমেরিকার একটা সাধারণ প্রথার রূপ পরিগ্রহ করেছে। ১৯৮০ সালে প্রচারিত ও প্রকাশিত বিভিন্ন প্রকার ভবিষ্যদ্বাণীর উপর পরিচালিত এক গবেষণা জরিপে দেখা যায়, সবচেয়ে নির্ভুল ভবিষ্যদ্বাণীর মাত্র ২৪% সঠিক হয়েছিল!
২. যাদের সঙ্গে জ্বিনের সখ্যতা ও যোগাযোগ এবং বিভিন্ন ধরনের অপজ্ঞান রয়েছে, তারা এ দ্বিতীয় শ্রেণীর দলভুক্ত।
এ দলটির গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি, কারণ এর শিরকের মত বৃহত্তর ও জঘন্যতম গুণাহের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ কাজে জড়িতদের উপস্থাপিত তথ্যাবলী সাধারণত কিছুটা নির্ভুল হয়, যা মুসলিম ও অমুসলিম উভয়ের জন্য বড় ফিৎনার কারণ।
জ্বিনের জগৎ (১ম ভাগ)
‘জ্বিন’ সম্পর্কে কোরআনে সম্পূর্ণ একটি সূরা অবতীর্ণ হওয়া সত্ত্বেও কিছু কিছু লোক জ্বিনের অস্তিত্বকে অস্বীকার করার চেষ্টা করেছে। ক্রিয়াপদ ‘জান্না’, ‘ইয়াজুন্ন’ হতে উৎপন্ন হওয়া ‘জ্বিন’ শব্দটির আক্ষরিক অর্থের ভিত্তিতে তারা দাবী করে, জ্বিন হচ্ছে ‘চতুর ভিনদেশী’ বা ‘ভিন্ন জাতের প্রাণী’। আবার অনেকে এমনও দাবী করেন যে, জ্বিন হচ্ছে স্বভাবে অগ্নিময় এমন ধরনের মানুষ যার মস্তিস্কে অন্তরের উপস্থিতি নেই। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এ পৃথিবীতে মানুষের সঙ্গে সহাবস্থানকারী আল্লাহর অপর এক সৃষ্টি হল জ্বিন জাতি। মানব জাতির সৃষ্টির পূর্বেই আল্লাহ তায়ালা জ্বিন জাতি সৃষ্টি করেন। মানব সৃষ্টির উপাদান হতে ভিন্নতর উপাদানের সমষ্টিতে আল্লাহ তায়ালা জ্বিন জাতি সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“অবশ্যই আমি মানুষকে ছাঁচে ঢালা শুকনো ঠনঠনে মাটি থেকে পয়দা করেছি, আর (হ্যাঁ,) জ্বিন! তাকে তো আমি আগেই আগুনের উত্তপ্ত শিখা থেকে সৃষ্টি করেছি।” {সূরা আল হিজর, আয়াত ২৬-২৭}
লোকচক্ষুর আড়ালে থাকার কারণে তাদেরকে জ্বিন নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা আদমকে সিজদা করার হুকুম দানকালে ফিরিশতাদের মাঝে অবস্থান করা সত্ত্বেও ইবলীস (জ্বিন জাতির অন্তর্ভুক্ত) সিজদা করতে অস্বীকার করলে তাকে এ অবাধ্যতার কারণ জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “সে বললো (হ্যাঁ), আমি তো তার চাইতে শ্রেষ্ঠ; তুমি আমাকে আগুন থেকে বানিয়েছো আর তাকে বানিয়েছো মাটি থেকে।” {সূরা সোয়াদ, আয়াত ৭৬}
আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, “ফিরিশতাদের নূর (আলো) হতে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং জ্বিনদেরকে করা হয়েছে আগুন হতে।” {সহীহ মুসলিম, হা/৭১৩৪}
আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন,
“(স্মরণ করো,) যখন আমি ফিরিশতাদের বলেছিলাম, তোমরা সবাই আদমকে সিজদা করো, তখন তারা সবাই সিজদা করলো, কিন্তু ইবলিস ছাড়া, (সে সিজদা করলো না); সে ছিলো (আসলে) জ্বিনদেরই একজন …” {সূরা আল কাহাফ, আয়াত ৫০}। তাই ইবলিসকে পদস্খলিত ফিরিশতা মনে করা ভুল।
জ্বিনদের অস্তিত্বের ধরন অনুযায়ী এদেরকে সাধারণত তিন শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, “তিন শ্রেণীর জ্বিন রয়েছে। এক প্রকার জ্বিন সারাক্ষণ আকাশে উড়ে বেড়ায়, দ্বিতীয় প্রকার জ্বিনেরা সাপ ও কুকুর হিসাবে বিদ্যমান, তৃতীয় প্রকার জ্বিন পৃথিবী অভিমুখে অগ্রসরমান তথা পৃথিবীতে অবস্থান করে এবং এরা এক জায়গায় বসবাস করা সত্ত্বেও এখানে সেখানে উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘোরাফেরা করে।” {আত-ত্বাবারী ও আল-হাকিম}
জ্বিনের জগৎ (২য় ভাগ)
জ্বিনজাতির বিশ্বাসকে কেন্দ্র করে তাদেরকে দু’শ্রেণীতে ভাগ করা যেতে পারে। মুসলিম (আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাসী) এবং কাফির (আল্লাহর অস্তিত্বে অবিশ্বাসী)। আল্লাহ তায়ালা মুসলিম জ্বিনদের সম্পর্কে বলেন,
“(হে নবী,) তুমি বলো, আমার কাছে এ মর্মে ওহী নাযিল করা হয়েছে যে, জ্বিনদের একটি দল (কোরআন) শুনেছে, অতঃপর তারা (নিজেদের লোকদের কাছে গিয়ে) বলেছে, আমরা এক বিস্ময়কর কোরআন শুনে এসেছি, যা (তার শ্রোতাকে) সঠিক (ও নির্ভুল) পথ প্রদর্শন করে, তাই আমরা তার ওপর ঈমান এনেছি এবং আমরা আর কখনো আমাদের মালিকের সাথে কাউকে শরীক করবো না, আর (আমরা বিশ্বাস করি,) আমাদের মালিকের মানমর্যাদা সকল কিছুর ঊর্ধ্বে, তিনি কাউকে স্ত্রী কিংবা পুত্র হিসেবে গ্রহণ করেননি, (আমরা আরো জানি,) আমাদের (কতিপয়) নির্বোধ আল্লাহ তায়ালার ওপর অসত্য ও বাড়াবাড়িমূলক কথাবার্তা আরোপ করে”{সূরা আল জ্বিন, আয়াত ১-৪}
অনত্র আল্লাহ বলেন,
“আমাদের মধ্যে কিছু আছে যারা (আল্লাহর অনুগত) মুসলিম, আবার কিছু আছে যারা সত্যবিমুখ (কাফির); যারা (আল্লাহর) আনুগত্যের পথ বেছে নিয়েছে তারা মুক্তি ও সৎপথই বাছাই করে নিয়েছে। যারা সত্যবিমুখ তারা অবশ্যই জাহান্নামের ইন্ধন (হবে)” {সূরা আল জ্বিন, আয়াত ১৪-১৫}
কাফির (অবিশ্বাসী) জ্বিনদেরকে বিভিন্ন নামে আরবীতে ও বাংলাতে উল্লেখ করা হয়ঃ ইফরীত, শয়তান, ক্বারীন, দৈত্য, পিশাচ, অপদেবতা, ভূত, পেত্নী, প্রেতাত্মা ইত্যাদি। এরা নানাভাবে মানুষকে ভ্রান্তপথে পরিচালিত করার আপ্রাণ চেষ্টা-সাধনা করে থাকে। যে কেউ তাদের প্রতি কর্ণপাত করে, সে-ই তাদের কর্মী হিসাবে মানবীয় শয়তান রূপে পরিগণিত হয়।
এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“আমি এভাবেই প্রত্যেক নবীর জন্যে (যুগে যুগে কিছু কিছু) দুশমন বানিয়ে রেখেছি মানুষের মাঝ থেকে, (কিছু আবার) জ্বিনদের মাঝ থেকে” {সূরা আল আনয়াম, আয়াত ১১২}
Watch Interview with Dr. Abu Ameenah Bilal Philips:
প্রতিটি মানুষের সঙ্গে ক্বারীন (সঙ্গী) নামক একজন জ্বিন রয়েছে। এটা এ জীবনে মানুষের পরীক্ষার অন্যতম এক গুরুত্বপূর্ণ দিক ব্যতীত কিছুই নয়। এ জ্বিনটি তাকে নিচু প্রকৃতির কামনা-বাসনার প্রতি অবিরত উৎসাহিত করে এবং সরল-সত্য পথ থেকে বিচ্যুত করার প্রচেষ্টায় রত থাকে। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন যে, “জ্বিনদের মধ্য হতে একজন করে সাথী তোমাদের প্রত্যেকের সঙ্গে যুক্ত করে দেয়া হয়েছে। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, এমনকি আপনার সাথেও, হে রাসূলুল্লাহ (সা.)! তিনি উত্তরে বলেন, হ্যাঁ আমার সাথেও। কিন্তু ব্যতিক্রম হচ্ছে যে, আল্লাহ তায়ালা আমাকে এ ব্যাপারে সাহায্য করেছেন এবং সে আনুগত্য স্বীকার করেছে। তাই সে আমাকে শুধু সৎকাজ করতে বলে।”{সহীহ মুসলিম হা/৬৭৫৭}
সুলায়মান (আ.)-কে নবুয়তের নিদর্শন স্বরূপ জ্বিনদের নিয়ন্ত্রণ করার মত অলৌকিক ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছিল। আল্লাহ বলেন,
“সুলায়মানের (সেবার) জন্যে মানুষ, জ্বিন ও পাখীদের মধ্য থেকে এক (বিশাল) বাহিনী সমবেত করা হয়েছিলো, এরা আবার বিভিন্ন ব্যূহে সুবিন্যস্ত ছিলো।” {সূরা আন্ নামল, আয়াত ১৭}
কিন্তু অন্য কাউকে এ ক্ষমতা দেয়া হয়নি। জ্বিনদেরকে নিয়ন্ত্রণ করার অনুমতি কাউকে প্রদান করা হয়নি। তাছাড়া কেউ তা পারেও না। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, “আমার সালাত ভাঙ্গার জন্য গতরাতে জ্বিনদের মধ্য হতে এক ইফরীত* থু থু নিক্ষেপ করেছিল। তবে তার উপরে বিজয়ী হতে আল্লাহ তায়ালা আমাকে সাহায্য করেছেন। সকালে তোমাদের সবাইকে দেখানোর জন্য আমি তাকে মসজিদের একটি খুঁটির সাথে বাঁধতে চেয়েছিলাম। তারপর আমার ভাই
সুলায়মানের দোআ মনে পড়ল,
‘হে আমার মালিক, (যদি আমি কোনো ভুল করি) তুমি আমাকে ক্ষমা করো, তুমি আমাকে এমন এক সাম্রাজ্য দান করো, যা আমার পরে আর কেউ কোনোদিন পাবে না, তুমি নিশ্চয়ই মহাদাতা।’ {সূরা সোয়াদ, আয়াত ৩৫}” {বুখারী, হা/৭৫; মুসলিম, হা/১১০৪}
মানুষ জ্বিনদের নিয়ন্ত্রণ করতে অক্ষম। কেননা এ বিশেষ অলৌকিক ক্ষমতা কেবল সুলায়মান (আঃ)-কে প্রদান করা হয়েছিল। এমতাবস্থায় আছর বা আকস্মিক ঘটনা ব্যতীত অধিকাংশ সময় জ্বিনদের সঙ্গে যোগাযোগ সাধারণত ধর্মদ্রোহী ও নিষিদ্ধ কর্মকান্ড সম্পাদনের মাধ্যমে করা হয়। {আবূ আমীনাহ বেলাল ফিলিপ্স, জ্বিন সম্পর্কে ইবনে তাইমিয়ার রচনা, (ঢাকাঃ তাওহীদ পাবলিকেশন, ১৯৮৯), পৃ. ২১}। এভাবে উপস্থিত করা বা ডাকায় জ্বিনেরা তাদের সাথীদেরকে পাপকাজে লিপ্ত হতে ও স্রষ্টায় অবিশ্বাস করতে সাহায্য করতে পারে। আল্লাহ্‌র সাথে শরীক করার মত জঘন্য পাপকর্মে লিপ্ত করতে যত বেশী সম্ভব মানুষকে আকৃষ্ট করাই তাদের মূল উদ্দেশ্য।
জ্বিনদের সাথে গণকদের একবার যোগাযোগ ও চুক্তি সম্পন্ন হলে ভবিষ্যতে ঘটবে এমন কিছু ঘটনা সম্পর্কে জ্বিন তার অনুসারী গণকদের জানাতে পারে। ভবিষ্যতে ঘটবে এমন সব ঘটনার সংবাদ জ্বিনেরা কিভাবে সংগ্রহ করে সে সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, জ্বিনেরা প্রথম আসমানের নিম্নাংশ পর্যন্ত পৌঁছতে এবং ভবিষ্যতে ঘটবে এমন সব ঘটনাবলী সম্পর্কে ফিরিশতারা পরস্পর যে আলোচনা করে তা শুনতে সক্ষম। তারপর তারা পৃথিবীতে ফিরে এসে শ্রবণকৃত সংবাদগুলো তাদের সেই চুক্তিকৃত বন্ধুদের নিকট পরিবেশন করে। {বুখারী; মুসলিম হা/৫৫৩৮} মুহাম্মদ (সা.)-এর নবুঅত প্রাপ্তির পূর্বে এ ধরনের অনেক ঘটনা সংঘটিত হত এবং গণকরাও তথ্য প্রকাশে অনেকাংশে নির্ভুল ছিল। তারা রাজকীয় আদালতে আসীন হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করার পাশাপাশি প্রচুর জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। এমনকি পৃথিবীর কিছু কিছু দেশে তাদের পূজা-অর্চনাও করা হত।
রাসূল (সা.)-এর উপরে কোরআন নাযিল হওয়ার সময় হতেই এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। আসমানের নীচের অংশে পাহারা দেবার জন্য ফিরিশতাদের নিযুক্ত করা হয় এবং বেশিরভাগ জ্বিনকে উল্কা ও ধাবমান নক্ষত্র দিয়ে তাড়ানো হয়।
এক জ্বিন কর্তৃত বর্ণিত বিস্ময়কর ঘটনাটি আল্লাহ্ তায়ালা কোরআনের ভাষায় উল্লেখ করেছেন,
“আমরা আকাশমন্ডল ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি, আমরা একে কঠোর প্রহরী ও উল্কাপিন্ড দ্বারা ভরা পেয়েছি, আমরা আগে তার বিভিন্ন ঘাটিতে কিছু (একটা) শোনার প্রত্যাশায় বসে থাকতাম; কিন্তু এখন আমাদের কেউ যদি (এসব ঘাটিতে বসে) কিছু শোনার চেষ্টা করে, তাহলে সে প্রতিটি জায়গায় আগে থেকেই তার জন্যে (পেতে রাখা এক) একটি জ্বলন্ত উল্কাপিন্ড (দেখতে) পায়” {সূরা আল জ্বিন, আয়াত ৮-৯}
আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন,
“তাকে আমি প্রতিটি অভিশপ্ত শয়তান থেকে হিফাযত করে রেখেছি। হ্যাঁ, যদি কেউ চুরি করে (ফিরিশতাদের) কোনো কথা শুনতে চায় তাহলে সাথে সাথেই একটি প্রদীপ্ত উল্কা তার পেছনে ধাওয়া করে।” {সূরা আল হিজর, আয়াত ১৭-১৮}
* ইফরীত = খুব শক্তিশালী ও ক্ষমতাবান জ্বিন (E.W. Lane, Arabic-English Lexicon, (Cambridge, England: Islamic Texts Society, 1984), Vol. 2, p. 2089.
জ্বিনের জগৎ (শেষ ভাগ)
ইবনু আব্বাস (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) এবং তাঁর একদল সাহাবী উকায বাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করলে আসমান থেকে ইলাহী সংবাদ শ্রবণে শয়তানরা বাধাগ্রস্থ হল।* তাদের প্রতি উল্কাপিন্ড নিক্ষিপ্ত হল। তাই তারা ফিরে এল তাদের লোকজনের নিকটে। তাদের লোকেরা ফিরে আসার কারণ জিজ্ঞেস করলে তারা সংঘটিত ঘটনা বলল। কেউ কেউ বলল, নিশ্চয়ই কিছু একটা ঘটেছে; ফলে তারা কারণ উদঘাটনে পৃথিবীর চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ল। তাদের মধ্যে কয়েকজন রাসূল (সা.) এবং তাঁর সাহাবীদেরকে সালাতরত অবস্থায় দেখতে পেয়ে কোরআন তেলাওয়াত শ্রবণ করল। এমতাবস্থায় তারা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করল যে, নিশ্চয়ই এটাই তাদেরকে আসমানী সংবাদ শ্রবণ থেকে বাধা দান করেছে। তখন তারা তাদের লোকজনের নিকটে ফিরে গিয়ে বলল,
“আমরা এক বিস্ময়কর কোরআন শুনে এসেছি, যা (তার শ্রোতাকে) সঠিক (ও নির্ভুল) পথ প্রদর্শন করে, তাই আমরা তার ওপর ঈমান এনেছি এবং আমরা আর কখনো আমাদের মালিকের সাথে কাউকে শরীক করবো না” {সূরা আল জ্বিন, আয়াত ১-২}। {বুখারী, হা/৪৪৩; মুসলিম, হা/৯০৮; তিরমিযী, আহমদ}
রাসূলুল্লাহ (সা.) কর্তৃক ইসলাম প্রচারের পূর্বে জ্বিনেরা ভবিষৎ সম্পর্কে বিভিন্ন সংবাদ সংগ্রহ করতে সক্ষম হলেও পরবর্তীতে তা আর পারেনি। এ কারণে তারা তাদের সংবাদের সঙ্গে অনেক মিথ্যা মিশ্রিত করে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, “জ্বিনেরা সংবাদ পাঠাতেই থাকবে যতক্ষণ না এটা যাদুকর বা গণক পর্যন্ত পৌঁছে। মাঝে মাঝে সংবাদ পাঠানোর পূর্বেই একটি উল্কাপিন্ড আঘাত করবে। আর উল্কাপিন্ড দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার পূর্বেই যদি সংবাদটি পাঠাতে সক্ষম হয়, তাহলে এর সঙ্গে একশ’টা মিথ্যা যোগ করে পাঠাবে।” {বুখারী, হা/২৩২; তিরমিযী}
আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে গণকদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘এরা কিছুই না’। তারপর গণকদের কথা মাঝে মাঝে সত্য হওয়ার ব্যাপারে আয়েশা (রা.) উল্লেখ করলেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘এটা সত্য সংবাদের অংশবিশেষ যা জ্বিনেরা চুরি করে এবং এ তথ্যের সঙ্গে একশ’টি মিথ্যা যুক্ত করে তার বন্ধুর কাছে প্রকাশ করে’। {বুখারী, হা/৬৫৭; মুসলিম, হা/৫৫৩৫}

ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) একদিন বসেছিলেন, এমন সময় এক সুদর্শন লোক**তাঁর পাশ দিয়ে চলে গেল। ওমর (রা.) বললেন, ‘আমার যদি ভুল না হয়, লোকটি এখনও প্রাক-ইসলামী বিশ্বাসের অনুসরণকারী অথবা সম্ভবত সে তাদের মধ্যে যেসব গণক রয়েছে তার অন্তর্ভুক্ত। ওমর (রা.) লোকটিকে তাঁর নিকটে আনার জন্য আদেশ করলেন এবং তিনি তাঁর অনুমানের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলেন। লোকটা উত্তর দিল, একজন মুসলিমকে আজ এমন এক অভিযোগের সম্মুখীন হতে হচ্ছে, যা আমি আর কখনও দেখিনি। ওমর (রা.) বললেন, নিশ্চয়ই আমাকে এ ব্যাপারে জানানো তোমার দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত। তারপর লোকটি বলল, জাহেলী যুগে আমি তাদের ভবিষৎ-গণনাকারী ছিলাম। এ কথা শুনে ওমর (রা.) বললেন, সবচেয়ে বিস্ময়কর যে বিষয়টি তোমার পরী (নারী জ্বিন) তোমাকে বলেছে তা আমাকে বল। লোকটি তখন বলল, আমি একদিন বাজারে থাকাবস্থায় সে উদ্বিগ্ন হয়ে আমার নিকটে আগমন করে বলল, ‘অপমান হওয়ার পর হতাশাগ্রস্থ অবস্থায় তুমি কি জ্বিনদের দেখতে পাওনি? আর তাদেরকে (জ্বিনদেরকে) এমন অবস্থায় দেখতে পাওনি যে, তারা মাদী উট ও এদের পিঠে আরোহণকারীদের অনুসরণ করছে?’ ওমর (রা.) মন্তব্য করে বললেন, ‘হ্যাঁ, এটা সত্য’। {বুখারী, হা/২০৬}
জ্বিনদের সাথে যোগাযোগকারী মানুষকে অর্থাৎ জ্বিনদের সাহায্যে যেসব ভবিষ্যদ্বক্তারা ভবিষ্যদ্বাণী করেন, তাদেরকে জ্বিনেরা অতি নিকট-ভবিষ্যত সম্পর্কে জানাতে সক্ষম। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, ভবিষ্যদ্বক্তার নিকটে কেউ গমন করলে, উপস্থিত ব্যক্তিটি গণকের নিকটে আসার পূর্বে কী কী পরিকল্পনা তৈরী করেছিল তা গণকের জ্বিন আগত ব্যক্তির সাথী জ্বিনের {(ক্বারীন)- যে জ্বিন প্রতিটি মানুষের সাথে সর্বদা অবস্থান করে।} নিকট থেকে অবগত হয়। ফলে আগত ব্যক্তিটি কী কী করবে বা কোথায় কোথায় যাবে তা জানাতে গণক সক্ষম হয়। আর এভাবেই একজন গণক বা ভবিষ্যদ্বক্তা আগন্তুক ব্যক্তির অতীত সম্পূর্ণভাবে জানতে পারে। সেই গণক সবিস্তারে বলতে সক্ষম হয়, আগন্তুকের পিতা-মাতার নাম, জন্মস্থান এবং ছোটবেলার কর্মকান্ড সম্পর্কে। জ্বিনের সাথে যোগাযোগ রয়েছে এমন একজন ভবিষ্যদ্বক্তার আলামত হচ্ছে যে, সে বিস্তারিতভাবে অতীতের বর্ণনা দিতে পারবে। কারণ মুহূর্তের মধ্যেই বিশাল ব্যবধানের দূরত্ব অতিক্রম করা, গোপনীয় বিষয় বা ঘটনা, হারানো দ্রব্য, অদৃষ্ট ঘটনাবলী সম্পর্কে অনেক তথ্য সংগ্রহ ও সরবরাহ করা জ্বিনের সাধারণ একটি বৈশিষ্ট্য। এ ক্ষমতার সত্যতা আমরা নবী সুলায়মান (আ.) এবং সাবার রাণী বিলকিস সম্পর্কে কোরআনের বিবরণে দেখতে পাই। সুলায়মান (আ.)-কে রাণী বিলকিস দেখতে আসলে, রাণীর দেশ থেকে তার সিংহাসন নিয়ে আসতে তিনি (সুলায়মান) উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে নির্দেশ প্রদান করলেন এবং তৎক্ষণাৎ সেখানে উপস্থিত মানুষ, জ্বিনসহ অন্যদের মধ্যে,
“বিশাল (বপুবিশিষ্ট) এক জ্বিন দাঁড়িয়ে বললো, তোমরা বর্তমান স্থান থেকে উঠবার আগেই আমি তা তোমার কাছে নিয়ে আসবো, এ বিষয়ের ওপর আমি অবশ্যই বিশ্বস্ত ক্ষমতাবান।” {সূরা আন্ নামল, আয়াত ৩৯}
* মূলতঃ এ দিন বা এ সময় থেকে শয়তানদের ইলাহী খবরাখবর শোনায় বাধা প্রদান এবং তাদের উপর উল্কাপিন্ড নিক্ষেপ করা শুরু হয়নি। বরং তা এর আগে থেকেই শুরু করা হয়েছিলো। হয়তো শয়তানরা এর কারণ এ ঘটনার মাধ্যমে এ সময়ে জানতে পেরেছে মাত্র। কারণ এ সম্পর্কিত যেসব শব্দ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, তা অতীত নির্দেশক। দ্রঃ সহীহ বুখারী, ২য় খন্ড, পৃ. ৭৩২।
** তার নাম হল, সাওয়াত ইবনে ক্বারিব।
ভাগ্য গণনা সম্পর্কে ইসলামের বিধান
তাওহীদ বিরুদ্ধ শিরকী ও কুফরী বিশ্বাস জড়িত থাকার কারণে ইসলাম ভাগ্য গণনার প্রতি কঠোর দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছে। ভাগ্য গণনায় লিপ্তদেরকে এ নিষিদ্ধ চর্চা ত্যাগ করতে উপদেশ দান ছাড়াও ইসলাম তাদের সঙ্গে যে কোন ধরনের সম্পৃক্ততার বিরোধিতা করে।
গণকের নিকট গমন করা
গণকের যে কোন ধরনের দর্শনের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সা.) সুস্পষ্টভাবে নীতি নির্ধারণ করেছেন। হাফছা (রা.) থেকে ছাফিয়া বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যদি কেউ কোন গণক, গায়বী বিষয়ের সংবাদদাতা বা ভবিষ্যদ্বক্তার নিকট গমন করে তাকে কিছু জিজ্ঞেস করে তবে ৪০ দিবস পর্যন্ত তার কোন সালাত কবুল হবে না’। {মুসলিম হা/৫৫৪০}
এ হাদীসে বর্ণিত শাস্তি শুধু গণকের নিকটে গমন করে কৌতুহল বশতঃ তাকে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার জন্য। এ নিষিদ্ধতা আরও সমর্থিত হয়েছে মু’আবিয়া ইবনে আল-হাকাম আস-সুলামী বর্ণিত হাদীস দ্বারা। এ হাদীসে মু’আবিয়া (রা.) বলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! নিশ্চয়ই আমাদের মধ্যে এমন কিছু লোক রয়েছে, যারা গণকের নিকটে যায়। রাসূল (সা.) উত্তর দিলেন, ‘তাদের কাছে যাবে না’।{মুসলিম হা/৫৫৩২}
এ ধরনের কঠিন শাস্তির বিধান নির্দিষ্ট করা হয়েছে কেবল গণকের নিকট গমনের জন্য। কারণ ভবিষ্যদ্ববাণী বিশ্বাস করার ক্ষেত্রে এটাই প্রথম পর্যায়। যদি কেউ ভবিষ্যদ্ববাণীর বাস্তবতায় দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে গণকের নিকট গমন করে, আর গণকের কোন ভবিষ্যদ্বাণী সত্যরূপে পরিগণিত হয়, তাহলে নিশ্চিতভাবেই সে গণকের সমর্থক ও ভবিষ্যদ্ববাণীর প্রতি উৎসাহী ও বিশ্বাসী হবে।
গণকের নিকটে গমন করা সত্ত্বেও কোন ব্যক্তি উক্ত চল্লিশ দিনের বাধ্যতামূলক সালাত আদায় করতে বাধ্য, যদিও ঐ সালাতের জন্য সে কোন প্রকার পুরস্কার পাবে না। আর সে যদি সকল সালাত পরিত্যাগ করে, তাহলে তো সে আরও একটি গুরুতর গুনাহ করল।
গণকের প্রতি বিশ্বাস
অদৃশ্য ও ভবিষ্যতে কী ঘটবে সে সম্বন্ধে গণক ওয়াকিফহাল এ বিশ্বাসে গণকের নিকটে গমন করা কুফরী কাজ।
আবূ হুরায়ারা এবং আল-হাসান উভয়ে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যদি কেউ কোন গণক বা ভবিষ্যদ্ববক্তার নিকট গমন করে তার কথা বিশ্বাস করে, তবে সে মুহাম্মাদ (সা.)-এর উপর অবতীর্ণ দ্বীনের প্রতি কুফরী করল’। {সুনান আবূ দাঊদ হা/৩৮৯৫; আহমাদ, আল-মুসনাদ, ২/৪২৯ পৃঃ; বায়হাক্বী; আলবানী, সহীহুত তারগীব, ৩/৯৭-৯৮}
এ ধরনের বিশ্বাস দ্বারা অদৃশ্য ও ভবিষ্যৎ বিষয়াদি সম্পর্কে আল্লাহর জ্ঞান রাখার মত গুণাবলীকে তাঁর সৃষ্টির প্রতি আরোপ করা হয়। ফলস্বরূপ তাওহীদুল আসমা ওয়াছ-ছিফাত ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এবং এক্ষেত্রে শিরকের সূচনা হয়। অর্থাৎ কেউ কোন জ্যোতিষী, গণক, রাশিবিদ, পীর, ফকীর, সাধু-দরবেশ ইত্যাদি গোপন জ্ঞানের দাবীদারকে গায়বী বা গোপন জ্ঞানের অধিকারী বলে বিশ্বাস করলে শিরক আকবার (বড় শিরক) সংঘটিত হবে।
গণকদের লেখা বই, পত্র-পত্রিকা বা গবেষণা-পত্র পড়া এবং তাদের অনুষ্ঠান রেডিওতে শ্রবণ করা বা টিভিতে দেখা ইত্যাদির মধ্যে সাদৃশ্য বিদ্যমান থাকায় এসব কর্মকান্ড কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। কারণ ভবিষ্যদ্বক্তারা তাদের ভবিষ্যদ্বাণী প্রচার ও প্রসারে বিংশ শতাব্দীতে এ মাধ্যমগুলো ব্যাপকভাবে ব্যবহার করছে। আল্লাহ তায়ালা পরিস্কারভাবে কোরআনে উল্লেখ করেছেন যে, তিনি ব্যতীত অন্য কেউই অদৃশ্য সম্পর্কে জ্ঞান রাখে না, এমনকি রাসূলও না।
“গায়বের চাবিগুলো সব তাঁর হাতেই নিবদ্ধ রয়েছে, সে-ই (অদৃশ্য) খবর তো তিনি ছাড়া আর কারোই জানা নেই” {সূরা আল আনয়াম, আয়াত ৫৯}
তিনি রাসূল (সা.)-কে বলেন,
“তুমি বলো, আমার নিজের ভালো-মন্দের মালিকও তো আমি নই, তবে আল্লাহ তায়ালা যা চান তাই হয়; যদি আমি অজানা বিষয় সম্পর্কে জানতাম, তাহলে আমি (নিজের জন্যে সে জ্ঞানের জোরে) অনেক ফায়দাই হাসিল করে নিতে পারতাম এবং কোনো অকল্যানই আমাকে স্পর্শ করতে পারতো না …” {সূরা আল আ’রাফ, আয়াত ১৮৮}
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন,
“আল্লাহ তায়ালা ছাড়া আসমানসমূহ ও যমীনে যা কিছু আছে, এদের কেউই অদৃশ্য জগতের কিছু জানে না” {সূরা আন্ নামল, আয়াত ৬৫}
অতএব ভবিষ্যদ্বক্তা, গণক এবং অনুরূপ ব্যক্তি কর্তৃক ব্যবহৃত নানা রকম পন্থা বা পদ্ধতিসমূহ মুসলিমদের জন্য নিষিদ্ধ। হস্ত রেখা গণনা, ভাগ্য গণনার মাধ্যম আই চিং, সাফল্যের বিস্কুট বা কেক ও চায়ের পাতার পাশাপাশি রাশিচক্র ও ‘Bio-rhythm’ নামক কম্পিউটার প্রোগ্রাম- এগুলোতে বিশ্বাস স্থাপনকারী লোকজনের দাবী অনুযায়ী, এসব উপায়সমূহ তাদের ভবিষ্যৎ সংক্রান্ত তথ্যাদি জানাতে পারে। অথচ আল্লাহ তায়ালা সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন যে, একমাত্র তিনিই অদৃশ্য ও ভবিষৎ সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন।
তিনি বলেন,“অবশ্যই আল্লাহ তায়ালার কাছে কেয়ামতের (সময়) জ্ঞান আছে, তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন, (সন্তানের) শুক্রকীটের মাঝে (তার বুদ্ধি, জ্ঞান, মেধা ও জীবনের ভাগ্যলিপি সংক্রান্ত) যা কিছু (মজুদ) রয়েছে তা তিনি জানেন, কোনো মানুষই বলতে পারে না আগামীকাল সে কি অর্জন করবে; না কেউ এ কথা বলতে পারে যে, কোন্ যমীনে সে মৃত্যুবরণ করবে; নিঃসন্দেহে (এ তথ্যগুলো একমাত্র) আল্লাহ তায়ালাই জানেন, (তিনি) সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে অবহিত।” {সূরা লুকমান, আয়াত ৩৪}
ফলে মুসলিমদের অবশ্যই বই-পুস্তক, পত্রিকা, সংবাদপত্র ইত্যাদির পাশাপাশি বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে সেসব লোকদের ব্যাপারে, যারা বিভিন্ন উপায়ে দাবী করে যে তারা ভবিষ্যৎ ও অদৃশ্য বিষয়ে জ্ঞান রাখেন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হক্বের উপর অটল থাকার তাওফীক্ব দান করুন- আমীন!

Post Top Ad

Your Ad Spot

প্রয়োজনীয়