পির আলী একজন মস্তবড় দরবেশ। একদিন নামাযের সময় তার সাথে শয়তানের সাক্ষাত হওয়ায় দু’জনের মাঝে কথোপকতন হচ্ছে।
পির আলী – কাতারের মধ্যে ফাঁকা স্থানে দাড়াঁইয়া জামাতে নামাজ আদায় কর নাকি?
শয়তান – হুজুর! শুধু জামাতের নামাজ নয়, আমার কাজ উদ্ধার করিতে গিয়ে অনেক সময় নফল নামাজ, নফল রোজাও আদায় করিতে হয়,
তবে শুনুন;
একদিন সন্ধ্যাবেলা এক বনের ভিতর দিয়া যাইতেছিলাম। কতদুর গিয়া দেখিলাম একখানা ছোট মসজিদের মধ্যে একজন দরবেশ
নামাজ আদায় করিতেছে, মনে চাইল একটু পরীক্ষা করি।
তাই বড় এক অলি-আল্লার ছুরতে লম্বা জামা ও বড় এক পাগড়ীসহ মসজিদে ঢুকিয়াই নফল নামাজ আরম্ভ করিয়া দিলাম।
ইতিমধ্যে আমার ইঙ্গিত অনুযায়ী আমার একজন শিষ্য লম্বা জামা ও বড় দেস্তার বাঁধিয়া নানারকম সুস্বাদু খাদ্যাদি পরিপূর্ণ
একখানা বড় ডিস হাতে নিয়া আমার পিছনে দাঁড়াইয়া ছিল। আমি বিশ পচিঁশ মিনিটের মধ্যেই দুই রাকাত নামাজ আদায় করিয়া পিছনের দিকে ফিরিয়া বলিলাম, কি বাবা আসিয়াছ? অমনি সেই দেস্তার বাঁধা ফেরেস্তারূপী শিষ্য আমার পা জড়াইয়া ধরিয়া খুব কান্নাকাটি আরম্ভ করিয়া দিল। আমি বলিলাম কি হইয়াছে? সে বলিল হুজুর!
আমাকে মাফ করুন আমি মস্ত বড় বেয়াদবী করিয়াছি। আপনি মাফ না করিলে আল্লাহ তা’আলাও মাফ করিবেন না।
হুজুর! আপনি জানেন যে, আজ চল্লিশ বছর যাবৎ আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী আমি প্রতিদিন এফতারের পূর্বে
বেহেস্তের নাস্তা নিয়া আপনার দরবারে হাজির হই। আজকেও আমি নাস্তা নিয়া আপনার সেই পূর্ব মসজিদে বসিয়া ছিলাম।
যখন দেখিলাম এফতারের সময় শেষ হইয়া গিয়াছে, তখন আমি অত্যন্ত ভীত হইয়া এই নাস্তা নিয়া আপনাকে চুতুর্দিকে খোঁজ করিয়াছি।
বহু খোঁজ করার পরে এখানে আসিয়া পাইয়াছি। আমি বলিলাম বাবা তোমার কোন দোষ নাই।
গতরাত্রের তাহাজ্জুদের ওয়াক্তে জিব্রাইল (আঃ) আসিয়া আমাকে বলিল হুজুর! আমি একটা জরুরী সংবাদ নিয়া আসিয়াছি।
আগামী রাত্রে আল্লাহ তা’আলা আপনার সাথে দেখা দিবেন, অতএব আপনি কোন নির্জ্জন স্থানে চলিয়া যান।
কারণ আল্লাহ তা’আলা দুনিয়ায় প্রকাশ্যভাবে কাহারো সাথে দেখা দেন না।
তাই হযরত মুসা (আঃ) নির্জন তুর পাহাড়ে আল্লাহর দীদার লাভ করিয়াছেন।
সেরা নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) নির্জন হেরা গুহায় আল্লাহ দর্শন পাইয়াছেন। অতএব আপনাকেও আল্লাহ তা’আলা নির্জন কোন স্থানে
যাইতে আদেশ করিয়াছেন। এই সংবাদ পাইয়া আল্লাহ তা’আলার আদেশ পালন করিবার জন্য এখানে আসিয়াছি। তুমি যাও তোমার কোন অপরাধ নাই।
শিষ্যটি চলিয়া যাইবার পরে ঐ দরবেশের প্রতি এক পলক চাহিয়া দেখিলাম সে মনোযোগ সহকারে আমাদের কথোপকথন শুনিয়াছে।
আমি নাস্তার ডিসখানা টানিয়া লইলাম এবং দরবেশটির দিকে চাহিয়া বলিলাম, আসুন ভাই সাহেব, আমার সাথে একটু নাস্তা করুন।
কারণ হযরত আলীর ন্যায় আমারও একটা অভ্যাস আছে, মেহমান ব্যতীত খানা খাই না। তবে আজকে কোন মেহমান পাব বলিয়া আশা ছিল না।
আল্লাহ পাক আপনাকে মিলাইয়াছেন। পরে দেখিলাম কাজে অনেকটা সুফল।
দরবেশটি আমার কথামত খানা গ্রহণ করিলে অমনি তাহার অন্তর চুক্ষে একটি আবরণ পড়িয়া গেল এবং সে আমার সঙ্গপ্রিয় হইয়া উঠিল।
আমার পরিচয় জানিতে চাওয়ায় এদিক সেদিক নানা কথার পরে বলিলাম আমি নির্জন স্থান খোঁজ করিতেছিলাম বলিয়া এখানে আসিয়াছি।
আপনি থাকিলে আমার একটু অসুবিধা তাই আমি অন্যত্র যাইতেছি।
ইহা শুনিবামাত্র সে আমাকে জড়াইয়া ধরিয়া বলিল, ‘হুজুর! আমি আপনাকে ছাড়িব না। দয়া পূর্বক আমাকেও একটু সৌভাগ্যশালী করুন।
বহু ধরপাকড়ের পর আমি বলিলাম, আপনি আল্লাহর নূরের তাজাল্লী সহ্য করিতে পারিবেন না।
সাবধান হযরত মুসা আ. কিন্তু বেহুঁশ হইয়া মাটিতে লুটাইয়া পড়িয়াছিল।
সে বলিল, হুজুর! আপনি যেভাবে বলেন, সেইভাবে কাজ করিব।
ইতিমধ্যে আমার পূর্ব ইঙ্গিত অনুযায়ী একজন্য শিষ্য আলোর ঝলকে সজ্জিত হইয়া
মহা প্রতাপ ও আড়ম্বরের সহিত পশ্চিম দিক দিয়া আকাশ পথে আমাদের কাছে আসিয়া হাজির হইল।
তখন আমি দরবেশকে লক্ষ্য করিয়া বলিলাম ঐ যে স্বয়ং আল্লাহ তা’আলার নূর দেখা যাইতেছে। তাড়াতাড়ি ছেজদা করুন।
দরবেশটি আগ-পর না ভাবিয়া বিনা দ্বিধায় আমার কথা অনুযায়ী যখন ছেজদা করিল,
তখন আমি সজোরে একটা হাসি দিয়া বলিলাম ‘কিল্লা ফতেহ’ মনের আনন্দে উৎফুল্ল হইয়া
দরবেশটিকে একটি লাথি দিয়া ফুটবলের ন্যায় মসজিদের বাহিরে ফেলিয়া দিলাম।
আর বলিলাম, আরে মুর্খ! কোরআন কিতাব না জানিয়া দরবেশ হইয়াছ? ভাল করিয়াছ।
ত্রিশ বছর যাবৎ এবাদত করিয়া শেষে শয়তানের একজন খাঁটি বান্দা হিসাবে নাম লিখিয়াছ।
চিন্তা করিও না বেহেস্ত না পাইলে দোজখ অবশ্যই পাইবা, সন্দেহ নাই।
অতঃপর ওখানের কাজ এইরূপে সমাধা করিয়া অন্যত্র রওয়ানা করিলাম।