আজ পবিত্র ঈদ-উল-আযহা, যার অপর নাম কোরবানির ঈদ। ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে ঘোরাফেরা, সাথে খাওয়া-দাওয়া। আর কোরবানি ঈদের অন্যান্য খাবারের সঙ্গে মূল আয়োজন হল মাংসের বিভিন্ন আইটেম। অবশ্যই মাংস খাবেন, কিন্তু চাই পরিমিতি জ্ঞান ও সংযম। চাই স্বাস্থ্য সচেতনতা।
# মনে রাখবেন, কোনও অবস্থাতেই দৈনিক খাদ্যতালিকায় চর্বি জাতীয় খাদ্য যেন ৩০ শতাংশের বেশি না হয়। মাংস ভালভাবে সিদ্ধ করে রান্না করবেন। নয়তো কৃমি সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। মনে রাখবেন, অল্প তাপে বেশি সময় ঢেকে মাংস রান্না করলে ভিটামিন ডি সংরক্ষিত থাকে।
# বেকড রান্না অনেক বেশি স্বাস্থ্য সম্মত। কাবাবের একটা সুবিধা হচ্ছে ঝলসানোর কারণে রান্না মাংসের থেকে কাবাবে চর্বির পরিমাণ কমে যায়। তবে খেয়াল রাখবেন কাবাবের মাংস যেনও আধা-সেদ্ধ না থাকে, না হলে ফিতা কৃমি হওয়ার ভয় থেকে যায়।এছাড়া কাবাবের সাথে নান-রুটি, পরোটা পরিহার করাই ভালো। পরিবর্তে কাবাবের সাথে এক প্লেট ফ্রেশ সালাদ হতে পারে একটি চমৎকার কম্বিনেশন।
# খাবার পরে কোল্ড ড্রিঙ্কের বদলে দই নিয়ে আসুন। সাথে রাখুন ঘরে তৈরি বোরহানি, লাবাং, মাঠা ইত্যাদি স্বাস্থ্যকর পানীয়। মাংস খাওয়া শেষে দই খাবেন। দই প্রবায়োটিকসের খুব ভাল উৎস, শুধু তাই নয়, ভুড়ি ভোজের পরে টক বা মিষ্টি দই খেলে সেদিনের মতো গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়।
# কোষ্ঠকাঠিন্য ঈদের সময়ের আরেকটি সাধারণ সমস্যা। এক্ষেত্রে ঈদের আগের রাতে বা ঈদের সকালে ইসবগুলের ভুষি পানিতে মিশিয়ে খেয়ে নিতে পারেন। এর সাথে প্রচুর পানি পান করে নেবেন। ঈদের দিন দুপুর ও রাতে অবশ্যই সবজির একটি পদ রাখবেন। আর সব খাবারের ফাঁকেফাঁকে পানি বা অন্যান্য স্বাস্থ্যকর পানীয় পান করতে ভুলবেন না।
# যাদের ইউরিক এসিড বেশি কিংবা যারা কিডনি রোগে আক্রান্ত, তারা অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মাংস খাবেন। এছাড়া যারা উচ্চ রক্তচাপ,হৃদরোগ কিংবা ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তারা অবশ্যই পরিমানমত খাবেন। অতিরিক্ত তেলমশলা এড়িয়ে যাবেন। পোলাও/ বিরিয়ানি যে কোনো একটি একবেলা খাবেন; মগজ/কলিজা এড়িয়ে যাওয়া ভাল; খাবারের সাথে সালাদ, টক দই , লেবু খাবেন। দিনের কোন একসময় অবশ্যই ৩০মি হেঁটে নিবেন। অবশ্যই ঈদের পরদিন থেকে স্বাভাবিক খাবারে ফেরত আসবেন।
# যারা নিয়মিত ঔষধ সেবন করছেন, উৎসব-আনন্দে তাদের ঔষধ সেবন যেন বাদ না পড়ে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।
# অবশ্যই স্বাস্থ্য সম্মত উপায়ে মাংস সংরক্ষণ করুন। মনে রাখবেন, পানি বিশেষ করে রক্ত ঝরানোটা খুব প্রয়োজন। নয়ত ফ্রিজের ঠাণ্ডায় মাংসের ভিতরে তা জমে বরফ হয়ে যায়, এতে করে মাংসের পুষ্টি মান কমে যায়, এমনকি স্বাদ ও নষ্ট হয়।ফ্রিজিং এবং থ’ য়িং এর বাজে প্রভাব এড়াতে মাংস ছোট ছোট প্যাকেট করে ফ্রিজিং করুন। এভাবে সংরক্ষণ করলে মাংসের প্রোটিন, আয়রন ও ফসফরাস সংরক্ষিত থাকে।
সব ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা এড়িয়ে পুষ্টিসমৃদ্ধ পরিমিত মজাদার খাবারের সাথে সবার ঈদ হয়ে উঠুক আনন্দময়; সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
শুভ কামনায়
শবনম মোস্তফা, নিউট্রিশন কনসালট্যান্ট
শিওর সেল মেডিক্যাল [বিডি] লি:
তথ্য সূত: ডক্টোরোলা।