Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

Sunday, July 26, 2015

মহাবিশ্বের বিবর্তনে মায়ান সভ্যতার ভবিষ্যত বানীর এক জ্ঞানগর্ভ পর্যালোচনা

লেখক: মোহাম্মাদ আলী।
[২০১২ সালে আমাদের সৌরমণ্ডল ২ হাজার বছরের মীনযুগ শেষ করে প্রবেশ করেছে কুম্ভযুগে। বিভিন্ন প্রাচীন জাতি এবং গোষ্ঠী এবং এস্ট্রোলজি অনুসারে কুম্ভযুগেই পৃথিবীতে ঘটবে মানবিক নৈতিক ও আত্মিক পুনর্জাগরণের। প্রাচীন জাতিদের মধ্যে মায়া, হপি, অ্যাজটেক, বেদ বিভিন্ন সময় কালের ভবিষ্যৎ বাণী করেছে। প্রথম পর্বে মায়া সভ্যতা, লং কাউণ্ট ক্যালেন্ডার এবং এর ভবিষ্যৎবাণী নিয়ে আমরা জানবো। এবং পরবর্তীতে বেদ, অ্যাজটেক, এবং হোপি সভ্যতা কুম্ভযুগের সম্বন্ধে কি বলেছে তা সংক্ষিপ্তকারে জানার চেষ্টা করবো।]

Age of Aquarius

সময় পরিবর্তনশীল। আসলে কোনো কিছুই স্থির নয়, এই মহাবিশ্বের সব কিছুই গতিময়। কিন্তু এই গতির মধ্যেও সব কিছুর মধ্যে রয়েছে এই মহাসূক্ষ্ম ভারসাম্য। পৃথিবী নিজ অক্ষের উপর ঘুরছে এবং এর বিভিন্ন গতি রয়েছে। আহ্নিকগতি, বার্ষিকগতি ছাড়াও আর এক ধরনের ঘূর্ণন রয়েছে একে বলা হয় বিষুব গতি। আমাদের পৃথিবীর মেরুঅক্ষ 23.5 ডিগ্রী হেলানো অবস্থায় রয়েছে এবং পৃথিবীর এই ঘূর্ণন ও অক্ষ মহাকাশে স্হির নয়। মেরু অক্ষ বরাবর এই ঘূর্ণনকে বলে Precession বা অয়নচল। কিন্তু কেন এই ঘূর্ণন? আমাদের পৃথিবী আসলে একটি আদর্শ গোলক নয়। পৃথিবীর পেটটা মোটা আর দুই মেরু চ্যাপ্টা যাকে আমরা বলতে পারি অবলেট স্ফেয়ার। এই অবলেট স্ফেয়ারের কারণে সূর্য ও চন্দ্রের মিলিত আকর্ষণ ঠিক এর কেন্দ্রে কাজ করে না, এর ফলে এর অক্ষরেখারও একটি ঘূর্ণন ঘটে।ঘূর্ণনের সময় এটি অতি সূক্ষ্মভাবে বাইরের দিকে পাক খেতে থাকে। ঘুরন্ত লাটিমের গতি ধীর হয়ে এলে যেমন তা বাইরের দিকে হেলে দুলে ঘুরতে থাকে, এটা অনেকটা এই রকমের। অয়নচলের বা precession-এর কারণে পৃথিবীর ঘূর্ণন-অক্ষ প্রতি ২৬,০০০ বছরে একটি পূর্ণ চক্র সম্পাদন করে।

Loading...
Zoom in (real dimensions: 1024 x 768)Image Loading...
Zoom in (real dimensions: 300 x 300)Image

আমরা যদি বছরের বিভিন্ন সময়ে মহাকাশে পৃথিবীর অবস্থান পর্যবেক্ষণ করি তাহলে দেখবো যে, রাতের আকাশের দৃশ্যাবলী পরিবর্তিত হচ্ছে, মনে হবে আকাশটা যেন ঘুরছে। আমাদের বিভিন্ন অবস্থানে চলাচলের কারণে নক্ষত্র পুঞ্জ বিভিন্ন স্থানে উদিত হয় এবং অস্ত যায়। এ অবস্থা পৃথিবীর প্রিসেশনের কারণেই ঘটে থাকে।একে বলা হয় Precession of Equinox.

Loading...
Zoom in (real dimensions: 301 x 448)Image
Loading...
Zoom in (real dimensions: 350 x 350)Image
Outside view of precession

মজার ব্যাপার হচ্ছে প্রাচীন ইন্ডিয়া, মিসর, হোপিদের লোকগাথা এবং ৫০০০ হাজার বছরের প্রাচীন সুমেরীয় রেকর্ড ইত্যাদি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে তাঁরা অনেক আগে থেকেই মহাকাশের মধ্যে দিয়ে এই ছুটে চলার বিষয়টি জানতো। এই Precession কে প্রাচীন ভারত থেকে শুরু করে মিসর পর্যন্ত সব সভ্যতাই সনাক্ত করতে পেরেছিলো।

Loading...
Zoom in (real dimensions: 283 x 313)Image

অতীতের সময়গুলোতে পৃথিবী বিভিন্ন গতিতে নক্ষত্রপুঞ্জের মধ্যে দিয়ে ভ্রমণ করেছে। এই মহাশূন্যর ভেতর দিয়ে আমাদের ভ্রমণ কে বর্ণনা করা হয়েছে একটি বৃত্তাকার পথ হিসেবে। এই বৃত্তাকার পথ জুড়ে ১২ টি নির্দিষ্ট নক্ষত্রপুঞ্জ কে ধরা হয়েছে zodiac Sign। ১২টি নক্ষত্রপুঞ্জের মধ্যে দিয়ে আবর্তন করা হয় বলে এর প্রত্যেকটিকে বৃত্তের এক একটি অংশ হিসেবে ধরা হয়েছে। প্রতিটিকে ৩০ ডিগ্রি হিসেবে ধরা হলে (১২x৩০=৩৬০ ডিগ্রি)। এই সময়ে দেখা যায় যে মহাকাশের ভেতর দিয়ে আমাদের পৃথিবী চলার সময় ব্যাপক দেখা গেছে। বর্তমানে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আমরা দেখি যে আমাদের Zodiac কক্ষপথের (orbit) মধ্যে দিয়ে পৃথিবীর ১ ডিগ্রি পথ অতিক্রম করতে সময় লাগে প্রায় ৭২ বছর। এই হিসেবে একেকটি জোডীয়াক সাইন পার হতে সময় লাগে ২,১৬০ বছর। Astrology এর ভাষায় একে বলা হয় zodiac age বা রাশি যুগ। বর্তমান পৃথিবীর গতিতে ১২ টি নক্ষত্রপুঞ্জের মধ্যে দিয়ে ভ্রমণ করতে সময় লাগে ২৫,৬২৫ বছর। হিসেবের সুবিধার্থে একে ধরা হয় ২৬০০০ বছর। জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী মীনযুগের পর আমরা প্রবেশ করেছি কুম্ভ যুগে বা এইজ অফ একুইরিয়াস এ (age of aquarius)। এই রাশি চক্রের ভেতর দিয়েই আমরা সামনে এগিয়ে চলি। আমাদের অগ্রগতি equinox মাধ্যমেই হয় যাকে বলি precession of equinox। এই precession ধারণাগুলো প্রাচীন সভ্যতা গ্রহণ করে যুগের পরিবর্তন মতবাদকে বিশেষ অর্থবহ করে তুলেছে। প্রাচীন গ্রিস ও মিশরের সভ্যতা নক্ষত্রপুঞ্জের মধ্যে দিয়ে এই মহাজাগতিক ভ্রমণের সময় ধরে ছিলো ২৫,৬২৫ বছর।

Loading...
Zoom in (real dimensions: 400 x 399)Image

অন্যদিকে মায়া, অ্যাজটেক, হোপি, হিন্দু সভ্যতার হিসেবে পৃথিবীতে পার হয়েছে একেকটি ৫,১২৫ বছর স্থায়ী কালচক্র। তাঁরা এর নাম দিয়েছিলেন পার্থিব যুগ। এই হিসেবে পুরো রাশি চিহ্নের ভ্রমণের মধ্যে রয়েছে ৫ টি পার্থিব যুগ।

যুগের নামকরণ

Loading...
Zoom in (real dimensions: 300 x 309)Image

রাশিচক্র বা ZODIAC এটি গ্রিক শব্দ zodiakos kyklos থেকে উদ্ভূত হয়েছে যার অর্থ প্রাণীদের চক্র। মজার ব্যাপার হচ্ছে একটি রাশিযুগ শেষ হয়ে কখন পরবর্তী যুগ শুরু হবে এই বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। নানা মুনির নানা মত রয়েছে এই বিষয়ে। প্রতি বছর বসন্ত বিষুবে (vernal equinox) সূর্য উঠার সময় কোনো নক্ষত্র পুঞ্জ সূর্যের পেছন থাকবে তার উপর ভিত্তি করে এই রাশি যুগের নামকরণ করা হয়। গত ২০০০ বছর ধরে সূর্য উঠার সময় মীন তারামণ্ডলীকে দেখা যাচ্ছে পূর্ব আকাশে। সুতরাং গত ২০০০ বছর ধরে আমরা বাস করছিলাম মিন যুগে। ধারণা করা হয় এই মীন যুগ শুরু হয়েছিলো ২১৬০ বছর আগে। যিশু খ্রিষ্টের জন্মের কিছু দিন আগে থেকে। আমরা বর্তমানে মীন যুগ থেকে প্রবেশ করেছি কুম্ভ যুগে (age of aquarius)। এই পদ্ধতিটি অত্যন্ত ধীর এবং অনেক লম্বা সময়কাল ধরে হয়। মুশকিল হচ্ছে কখন একটি শেষ হয়ে আর একটি শুরু হবে তার কোনো সুস্পষ্ট সীমা রেখা নেই। দুই যুগের মাঝে আমরা বলতে পারি overlapping থাকে। তাই আমরা বলতে পারি যে মোটামুটি ভাবে মিন যুগ শেষ করে 2012 এর 21 ডিসেম্বর এ আমরা প্রবেশ করেছি কুম্ভ যুগে।

Loading...
Zoom in (real dimensions: 500 x 400)Image

লক্ষ্য করলে দেখা যায় প্রতিটি রাশি চিহ্ন ইতিহাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। এবং বিভিন্ন যুগে এই চিহ্ন অনেকেই ব্যবহার করেছে। যেমন: মিন যুগের আগে ছিলো মেষ যুগ। প্রাচীন মিসরীয়রা (6th-11th BC) সূর্যদেবতার প্রতিনিধিত্বকারী আমেন-রা এর মাথায় স্থাপন করেছিলো সেই যুগের রাশি চিহ্ন মেষ প্রতীক। আবার মীন যুগের শুরুতে প্রথম দিকের খ্রিষ্টানরা তাঁদের ধর্মের জন্যে ব্যবহার করেছিলো যুগের রাশি চিহ্ন মিন প্রতীক, দুটি মুখোমুখি মাছ। যদিও রাশি যুগের সুনির্দিষ্ট সময়কাল নিয়ে ভিন্ন মত রয়েছে কিন্তু মোটামুটি ভাবে খ্রিষ্টপূর্ব ৯৬০০ থেকে বর্তমান পর্যন্ত ৬ টি যুগের সময়ে কি কি ঘটেছে সে বিষয়ে কোনো ভিন্ন মত নেই। প্রতিটি যুগ শনাক্ত করতে ইতিহাসবিদ এবং পণ্ডিতগণ সে সময়ের জন্যে এক একটি ঘটনা চিহ্নিত করেছেন। এগুলো সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হলো:

Loading...
Zoom in (real dimensions: 640 x 359)Image

রাশি যুগ = ঐতিহাসিক ঘটনা (Defining historical event)

সিংহ (LEO) =বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি/ হিমবাহ গলন

কর্কট (Cancer)=বাইবেল/ কোরআনে বর্ণিত মহাপ্লাবন

মিথুন(Gemini) =বর্ণমালা এবং লেখনীর উদ্ভাবন

বৃষ(Taurus)= মিসরীয় সভ্যতা

মেষ(Aries)= লৌহ যুগ


মিন (Pisces)= খ্রিষ্ট এবং ইসলাম ধর্মের জন্ম

Loading...
Zoom in (real dimensions: 900 x 567)Image
০-১৩ বাকতুনে সংঘটিত ঐতিহাসিক ঘটনা

কুম্ভ যুগ হচ্ছে পবিত্রবাদের যুগ। একটি নতুন আত্মিক এবং আধ্যাত্মিক যুগের সুচনা হচ্ছে এই যুগে। কুম্ভ যুগ হচ্ছে মানবতার যুগ। প্রাচীন কালগণকেরা রাশি যুগ এবং সুদীর্ঘ পার্থিব যুগ বর্ণনা করতে বিভিন্ন স্পষ্ট প্রতীক ব্যবহার করছেন। তাঁরা বিভিন্ন মন্দিরের প্রাচীরে নানা রকম চিত্রের মাধ্যমে সময়ের মানচিত্র (time maps) খোদাই করে গেছেন। এগুলো দেখলে বোঝা যায় তাঁদের মধ্যে অন্তত কয়েকজন জোডিয়াকের ভেতর দিয়ে পৃথিবীর গতিকে উপলব্ধি করেছিলেন। প্রত্নতাত্ত্বিকেরা সারা পৃথিবী থেকে বিভিন্ন ধরনের zodiac আবিষ্কার করেছেন। এর মধ্যে একটি হলো মিসরের নীল নদের তীরে দেবি হ্যাথরের (Hathor) মন্দিরের দেনদেরা জোডিয়াক (Dendera Zodiac)।

Loading...
Zoom in (real dimensions: 844 x 633)Image
প্রিসেসনাল বর্ণনা সমৃদ্ধ দেনদেরা জোডিয়াক

মায়ান সভ্যতা

Loading...
Zoom in (real dimensions: 595 x 379)Image
মায়ান-অ্যাজটেক ম্যাপ

মায়ানরা দেড় হাজার বছর আগে মেক্সিকোর গহিন অরণ্য বসবাসকারী একদল লোক। তাঁদের ছিলো উন্নত সভ্যতা, ছিলো বিশাল বিশাল মন্দির, এবং এই মন্দিরে ছিলো গ্যালাক্টিক চক্র নির্দেশক পঞ্জিকা। মায়ান সভ্যতা নিজেই এক রহস্য। আসলে কেউ এখন পর্যন্ত বলতে পারে নি এই মায়ান সভ্যতার কিভাবে উৎপত্তি এবং বিকাশ লাভ করেছিলো। বিশেষজ্ঞরা বলেন, মায়াদের আবির্ভাব ঘটেছিলো আকস্মিক ভাবে। বিখ্যাত বই Maya The Riddle And Rediscovery Of A Lost Civilization এর লেখক Charles Gallenkamp বলেছেন, কি ভাবে এই বিস্ময়কর সভ্যতা মানুষ বসবাসের এত প্রতিকূল স্থানে বিকশিত হয়েছিলো, তাও রহস্যজনক। তাই সংস্কৃতি এবং ইতিহাসের দিক দিয়ে মায়া সভ্যতা নিজেই একটি ব্যতিক্রম। মেক্সিকো, হন্ডুরাস এবং গুয়েতেমালা ও বেলাইজের অনেক অংশে প্রত্নতাত্ত্বিক সমীক্ষায় তাঁদের অনেক উন্নত স্থাপত্য, মহাজাগতিক মানমন্দির ও নির্ভুল ক্যালেন্ডারের সন্ধান পাওয়া গেছে। প্রাচীন মায়ানদের সময় সম্পর্কে আধুনিক হিসেব এবং উন্নত প্রযুক্তি অন্য সব প্রাচীন সভ্যতা এবং সংস্কৃতি থেকে আলাদা করে দেয়। সমতল ভুমি তে বসবাসকারী ক্লাসিক মায়াদের একটি বড় এবং বিস্তারিত ক্যালেন্ডার ছিলো। তাঁদের ছিলো নানা রকম মন্দির, পিরামিড, এবং চুনাপাথরের প্রাসাদ, এগুলোর মাঝে ছিলো নানা ধরনের স্থাপত্য নকশা। এই নক্সার মাঝে দেখা যায় সারি সারি স্তম্ভ সজ্জিত ভবন। তাদের দেয়ালচিত্র ও ভাস্কর্যে উচু মানের শিল্পকলা প্রকাশিত হয়েছে। অ্যানথ্রপলজির প্রোফেসর Michael D. Coe তার The Maya বইতে এই সব চমৎকার বর্ণনা দিয়েছেন।

Loading...
Zoom in (real dimensions: 500 x 332)Image
The 'Palace' and the astronomical observatory at Palenque ruins, Mexico
Loading...
Zoom in (real dimensions: 320 x 450)Image
রা কুক (RA-KUK)প্রাচীন মায়ান নভোচারী

মায়ানদের নিয়ে অনেক তত্ত্ব রয়েছে। কিন্তু কেউই এই “মায়ান ধাঁধা” রহস্য বের করতে পারে নাই। Charles Gallenkamp মায়ানদের আকস্মিক অন্তর্ধান পর্যবেক্ষণ করে বলেন যে ‘নবম শতকে এই শহরগুলো ছেড়ে কেন চলে গেল তা সবচেয়ে হতবুদ্ধিকর প্রত্নতাত্ত্বিক রহসগুলোর একটি। এটি এখনও শুধুই গভীর অনুমানের আবরণে আচ্ছাদিত। ঠিক কি কারণে এই সভ্যতা অদৃশ্য হয়ে গেল এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা একমত না। মায়ানদের কালের সঠিকতা এবং সময়ের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম হিসেবের সঠিকতা আধুনিক যুগের কম্পিউটার এবং স্যাটেলাইট PROBE দিয়ে বর্তমানে প্রমাণ করা গেছে।

মায়ান লং কাউণ্ট ক্যালেন্ডার

Loading...
Zoom in (real dimensions: 402 x 400)Image

মায়ানরা অসাধারণ একটি calendar তৈরি করেছিলো। প্রোফেসর Michael D. Coe এই বিস্ময়কর ক্যালেন্ডার সম্বন্ধে বলেন, গত আড়াই হাজার বছরের মাঝে একটি দিনও তাঁদের হিসেবে ভুল হয় নি। মায়ানরা শুধু মহাজাগতিক সময় গণনা করে নি বরং ঐ সময়ের মাঝে মহাকাশে কি কি ঘটনা ঘটতে পারে তারও বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছে। মায়ানরা তাঁদের পঞ্জিকার উপর ভিত্তি করে হিসেব রাখতো। কিন্তু এ পঞ্জিকা দিয়ে শুধু পূর্ণিমা ও আমাবস্যার মতো সহজ দিন গোনার হিসেব রাখা হতো না, তাঁরা ট্র্যাকিং করতো মহাজাগতিক চক্র। সেই সাথে আকাশে যেসব মহাজাগতিক ঘটনা ঘটতো সেগুলোরও হিসেব তাঁরা রাখতো। যে ধরনের গাণিতিক হিসেব তাঁরা ব্যবহার করেছিলো, তা আধুনিক যুগের আগে তা অকল্পনীয় ছিলো। সর্বাধুনিক ক্যালেন্ডার পদ্ধতি ব্যবহার করে তাঁরা এমন কিছু করেছিলো, যা আজ আমাদের কাছে অবিশ্বাস্য। হাই স্পীড computer ও জটিল সব সফটওয়্যার ছাড়াই তাঁরা হিসেব করেছিলো পৃথিবী এবং আমাদের সৌরজগতের গতি।এবং সেই গতির সাথে সংযুক্ত করেছিলো আমাদের কেন্দ্রীয় মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি।

Loading...
Zoom in (real dimensions: 500 x 333)Image
pyramid-temple-pacal-votan

মায়ানদের লং কাউন্ট এই calendar এর মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এদের রয়েছে ছোট বড় কয়েকটি চক্র। এই calendar টির নাম এর নাম লং কাউন্ট। মায়ানদের দীর্ঘসময় ধরে হিসেব করার একটি গননা পদ্ধতি। calendar টিকে বাম থেকে ডান দিকে পড়তে হয়। প্রতিটি অংশের আলাদা আলাদা নাম রয়েছে, যার মান ধীরে ধীরে কমতে থাকে। সবচেয়ে বাম অংশের নাম বাকতুন (Baktun), এর দ্বারা বোঝানো হয় 1,44000 দিন কে বোঝায়, তার ডান পাশের নাম হলো কাতুন (katun), এটি ৭২০০ দিন নির্দেশ করে। এর পরেরটির নাম তুন (tun) এটি 360 দিন বোঝায়, ইউনাল (uinal) 20 দিন, এবং কিন(Kin) দিয়ে ১ দিন নির্দেশ করে।

Loading...
Zoom in (real dimensions: 400 x 392)Image Loading...
Zoom in (real dimensions: 640 x 465)Image

এই সঙ্কেত ব্যবহার করে মায়ানরা আমাদের যুগের শেষ দিনটির হিসেব রেখেছে ১৩.০.০.০.০। এর অর্থ বাকতুন (Baktun) চক্র ১৩ এবং অন্যান্য একক ০ .। ভাষান্তরিত করলে পাওয়া যায় ২০১২ সালের ২১ শে ডিসেম্বর। এই সময়ের পর আবার ক্যালেন্ডারটি রিসেট হয়ে আবার নতুন গণনা শুরু হবে। কিন্তু তাই বলে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবার কথা মায়ানরা বলে নি।

Loading...Image Loading...
Zoom in (real dimensions: 564 x 564)Image

মায়ান গ্যালাক্টিক টাইমারের মূল চাবিকাঠি ছিলো Tzolkin বা পবিত্র পঞ্জিকা নামে ২৬০ দিনের হিসেব। এই ক্যালেন্ডাররে সাথে সংযুক্ত রয়েছে অস্পষ্ট বছর বা vauge year নামে ৩৬৫ দিনের আরেকটি পঞ্জিকা বা ক্যালেন্ডার। দুইটিকে এক সাথে মিলিয়ে মায়ানরা কালের দুই চক্রকে দুইটি চাকার মধ্যবর্তী খাঁজের মতো করে ঘুরন্ত অবস্থা হিসেবে দেখতো। যতক্ষণ না কোনো এক বিরল মুহূর্তে Tzolkin এর এক দিন, vauge year এর ওই দিনটির সাথে মিলে না যেতো, ততক্ষণ এ ঘূর্ণন চলতে থাকতো। বিরল দিনটি ৫২ বছরের একটি সমাপ্তি নির্দেশ করে। একই সাথে এই চক্র ছিলো আরও বড় কালের অংশ, যা মায়ানদের কাছে পরিচিত ছিলো মহা চক্র নামে।

Loading...
Zoom in (real dimensions: 629 x 640)Image
Tzolkin wheels
Loading...
Zoom in (real dimensions: 600 x 600)Image

এই এই সব ক্ষুদ্র চক্র ছাড়াও মায়ানদের রয়েছে ৫,১২৫ বছর স্থায়ী একেকটি মহাচক্র। তাঁরা তাঁদের সূক্ষ্ম কালযন্ত্র ব্যবহার করে এমন কতকগুলো বছরের হিসেব করেছিলো, যেগুলো এক বিরল মহাজাগতিক ঘটনার সূচনা বিন্দুতে এসে থেমে যায়। জন মেজর জেনকিনস (John Major Jenkins) নামে এক গবেষক তার অসাধারণ গবেষণার মাধ্যমে ১৯৮০ সালের দিকে এ ঘটনাকে চিহ্নিত করেছেন। তার এই গবেষণার ফলেই আমরা জানতে পারি কেন মায়ানদের কাছে এই বিশেষ চক্রটির সমাপ্তি এত গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। এই চক্রের শেষে আমাদের সৌরজগৎ, সূর্য এবং আমাদের গ্রহ, মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রের সাথে এক অ্যালাইনমেণ্ট সৃষ্টি করবে। এইটি এমন এক অ্যালাইনমেণ্ট যা প্রতি ২৬০০০ বছরে এক বার ঘটে। তবে মায়ান মত অনুসারে এই মহাচক্র শেষ হলে এই সমাপ্তিটিই হবে নতুন যুগের সূচনা।

Loading...
Zoom in (real dimensions: 640 x 408)Image
TZOLKIN DATE

সৃষ্টিতাত্ত্বিক ও পৌরাণিক মায়ান দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে সচেতনা এবং মানবিক চেতনা বিকশিত হয় কতগুলো পর্যায়ের মধ্য দিয়ে। এই পর্যায়গুলো চক্র দিয়ে আবৃত কালের অংশ নিয়ে গঠিত হয়। প্রতিটি নতুন চক্রের সাথে আমরা আমাদের ভাবনাগুলোকে আমাদের চিন্তাগুলোকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ পাই। আমাদের যেসব ভাবনা অতীতে আমাদের সীমাবদ্ধতা বা ধ্বংস করে দিয়েছে, সেগুলো থেকে আমরা মুক্ত হতে পারি। একটি সময়ে এটি পূর্ণতা পায়। জেনকিনস এ মহাজাগতিক আধ্যাত্মিক চক্রের মধ্যে আমাদের মানবজীবনকে বর্ণনা করেন আলঙ্করিক ভাষায়। তিনি বলেন “২৬০ দিনের Tzolkin ক্যালেন্ডার তৈরি হয়েছে মানুষের ২৬০ দিন পর্যায়ের ভ্রুণতত্ত্বের (embryogenesis) উপর ভিত্তি করে। আরও উচ্চতর স্তরে, ২৬০ দিন Tzolkin প্রতীকীভাবে ২৬,০০০ বছর পর্যায়ের অগ্রগমন কে নির্দেশ বা গঠন করে। আমরা একে বলতে পারি মানবীয় আধ্যাত্মিক ভ্রুণতত্ত্ব (human spiritual embryogenesis)” আধুনিক বিজ্ঞানীরা স্বীকার করেন, এ ধরনের গ্যালাক্টিক চক্র ঘটবে। মায়ান পঞ্জিকায় যে ঘটনাটি বর্ণনা রয়েছে তাও তাঁরা স্বীকার করেন। কালিফনিয়ার লস এঞ্জেলেসের গ্রিফিথ অবজারভেটরির পরিচালক ই সি ক্রাপ বলেন যে, “ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন মায়ান ক্যালেন্ডারের মহাচক্রগুলোর একটি যে তাঁদের নির্দেশিত ২০১২ সালেই পূর্ণ হতে যাচ্ছে, সে বিষয়ে কোনো প্রশ্ন থাকতে পারে না”

মায়ান কসমোজেনেসিস

Loading...
Zoom in (real dimensions: 359 x 405)Image
Kuk zenith - Pyramid temple at Chichen-Itza Mexico

মায়ানরা বলে আমাদের সূর্য বা Kinich-Ahau, মাঝে মাঝেই কেন্দ্রীয় গ্যালাক্সির কেন্দ্রের সাথে সামঞ্জস্য বিধান করে। এবং কেন্দ্রীয় গ্যালাক্সি থেকে এক ধরনের আলোর বিচ্ছুরণ'(spark' of light) গ্রহণ করে যার ফলে সূর্য আমাদের আরও শক্তিশালী কিরণ প্রদান করে যাকে আমাদের বিজ্ঞানীরা একে বলেন সোলার 'solar flares'। এই সোলার ফ্লেয়ার এর সাথে সাথে সূর্যের magnetic field এর পরিবর্তন হয়। প্রতি ৫,১২৫ বছর পর পর এটি ঘটে। তাঁরা বলে যে পৃথিবীর ঘূর্ণনে বিচ্যুতির ফলে একটি মহা দুর্যোগও ঘটে যেতে পারে। মায়ানরা বিশ্বাস করে যে মহাজাগতিক পদ্ধতি বা এই বিশেষ breathing' of the galaxy, একটি চক্র যা কখনই পরিবর্তন হবে না। যা পরিবর্তন হবে তা হলো যুগের পরিবর্তন বা চেতনার পরিবর্তন।

Loading...
Zoom in (real dimensions: 600 x 368)Image
মায়ান নভোচারী

মায়ানরা কালগণকেরা মেক্সিকো এবং গুয়েতেমালায় বিশাল অঞ্চলে বড় বড় সব ফলকে (massive tablets) এবং মন্দিরে বর্তমান যুগের সমাপ্তির বিশেষ তারিখটি খোদাই করে গেছেন। একই সাথে ঐ যুগচক্র ট্র্যাকিং করার পদ্ধতিটিও তাঁরা সঙ্কেতের মাধ্যমেই লিখে রেখে যায়। কিন্তু বিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগের আগে তাঁদের বার্তা আমাদের পরিচিত গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের সাপেক্ষে অর্থবোধক হয়ে ওঠে নি। এই সময়ে মায়ান পণ্ডিত জোসেফ টি গুডম্যান ব্যাপক গবেষণা করে (Joseph T. Goodman, 1905) মায়ানদের সময়ের একটি হিসেব বের করেন। পরবর্তীতে ইউকাতান (Yucatan) পণ্ডিত হুয়ান মারটিনেজ হারনানদেজ (Juan Martinez Hernandez,1926) ইংরেজ প্রত্নতাত্ত্বিক জে এরিক এস থম্পসন (J.Eric S. Thompson, ১৯৩৫) মূল হিসেবের সত্যতা নিশ্চিত করেন। তাঁদের হিসেব করা তারিখই মায়ান মহাচক্রের সূচনা দিন হিসেবে সাধারণ ভাবে গ্রহণ করা হয়েছে। এ কাজে তাঁদের প্রত্যেকের নামের এক একটি অক্ষর দিয়ে এই হিসেবের নামকরণ করা হয় Goodman, Martinez, Thompson" correlation বা GMT correlation। তাঁদের উপলব্ধি এবং মায়ান যাজকদের নিজেদের ঐতিহ্য, এই দুইয়ের উপর ভিত্তি করে পঞ্জিকার হিসাব দাঁড়ায় ঃ সর্বশেষ চক্রটি শুরু হয়েছিল মায়ান তারিখ ০.০.০.০.০ এ। এর পরিচিত অনুবাদ দাঁড়ায় ১১ আগস্ট খ্রিস্টপূর্ব ৩১১৪ সাল। এই ৫১২৫ বছরের চক্র শেষ হবে ২১ শে ডিসেম্বর 2012।এই সময়ের পর এক মহাজাগতিক পরিবর্তনের মানবসভ্যতা এক নুতন যুগে প্রবেশ করবে। এবং এই যুগ মানুষকে স্বর্ণযুগে প্রবেশ করাবে।

Loading...
Zoom in (real dimensions: 333 x 500)Image
Tikal stone, Maya calendar, Mexico
'The Time of No-Time'


মায়ানদের যুগগণনায় একটি সময় রয়েছে যাকে বলা হয় 'The Time of No-Time' ।এটি ৫,১২৫ বছরের চক্রের শেষ ২০ বছর। তাঁদের হিসেব মতে এটি শুরু হবে ১৯৯২ সালে এবং শেষ হবে ২০১২ সালে।এটির নাম দিয়েছে তাঁরা কাতুন (Katún)। এই সময়টি হবে এক মহা উপলব্ধির সময় এবং মানব সভ্যতার জন্য এক মহা পরিবর্তনের সময়। এই সময় সৌর বায়ু অনেক বেশি তীব্র হয়ে যাবে। এই পরিবর্তন ঘটবে যেন আমরা মহাজাগতিক পরিবর্তন বুঝে আমাদের উচ্চতর স্তরে পদার্পণ করতে পারি। অতিরঞ্জিত বস্তুবাদ এবং দুঃখের কারণ থেকে মুক্ত হতে পারি।
Loading...Image Loading...Image


মায়ানরা বলে যে ,কাতুন(Katún) শুরু হওয়ার সাত বছরের মধ্যে, ১৯৯৯ সাল থেকে আমরা এক অন্ধকার সময়ে প্রবেশ করবো এই সময়ে আমরা নিজেদের কে আয়নায় যে ভাবে দেখি ঠিক সেই ভাবে আমাদের নিজেদের আচার আচরণ, ব্যাবহার নিজেরা দেখতে পাবো। এই সময় মানবজাতী প্রবেশ করবে Sacred Hall of Mirrors এ। সেখানে আমরা নিজেদের প্রকৃতি আচার ব্যাবহার নিজেরাই অবলোকন করতে পারবো। নিজেদের অবলোকন করার পর প্রতেক মানুষ তাঁদের নিজেদের ভয় এবং অন্যর প্রতি অশ্রদ্ধার ভাব দূর করবে।মায়ানরা বলে এই ঘটনা শুরু হবে সূর্যগ্রহণের মাধ্যমে । এই সূর্যগ্রহন চিহ্ন বা সঙ্কেত হিসাবে ধরা হবে। সময়কালটি হচ্ছে তাঁদের ভাষায় 13 Ahau, 8 Cauac ভাষান্তর করলে দাঁড়ায় ১১ই অগাস্ট ১৯৯৯ সাল। বিরল মহাজাগতিক গ্রহগুলোর সম্মিলনের (planetary alignment) সময়কাল শুরু হবে এই সময়ে।এক মহা আধ্যাত্মিক পুনরজাগরনের শুরুর আগাম সঙ্কেত হিসাবে আমরা পার করবো এই শেষ ১৩ বছর (Katún) সময়কাল।
Loading...
Zoom in (real dimensions: 410 x 305)Image


মায়ানরা সব কিছুই সংখ্যা দ্বারা বিবেচনা করে।তাঁদের ১৩ পবিত্র সংখ্যা শুরু হবে ১৯৯৯ সালের আগস্ট মাস থেকে। তাঁরা ভবিষ্যতবাণী করে যে, এই গ্রহনের পর থেকে প্রকৃতি তার নিজস্ব গতিতে কাজ শুরু করবে এবং এই গতিকে মানুষ কখনই থামাতে পারবে না। মানুষ যে সব প্রযুক্তির উপর ভরসা করে তা এই সময়ে তেমন কোন কাজে লাগবে না। আমরা তখন সমাজ এবং সভ্যতা থেকে তেমন কিছুই জানতে সক্ষম হব না। তাঁরা বলে আমাদের অন্তরের আধ্যাত্মিক জাগরন, শ্রদ্ধা এবং ভালবাসার স্থান থেকে আমাদের নতুন এক শিক্ষা শুরু হবে।

Loading...
Zoom in (real dimensions: 750 x 750)Image Loading...
Zoom in (real dimensions: 1024 x 972)Image

প্রথম মায়ান ভবিষ্যৎবাণী আমাদের সূর্য নিয়ে তাঁদের গবেষণার কথা বলে। প্রাচীন কালে মায়ানরা আবিস্কার করেছে আমাদের পুরো সৌরমণ্ডল ঘূর্ণায়মান রয়েছে। এমনকি আমাদের এই মহাবিশ্বেরও নিজস্ব একটি কক্ষপথ রয়েছে। দিন এবং রাতের মতো পুনরাবৃত্তিমূলক সময়কাল এখানেও দেখা যায়। এই সমস্ত আবিষ্কারের মাধ্যমে তাঁরা বুঝেছিল যে, আমাদের সৌরজগত এমন এক কক্ষপথে ঘূর্ণায়মান যার দ্বারা গ্যালাক্সির কেন্দ্র থেকে দূরে এবং কাছে চলাচল করতে পারে। অন্য কথায় আমরা বলতে পারি, মায়ানদের মতে, আমাদের সূর্য এবং এর সমস্ত গ্রহ কেন্দ্রীয় গ্যালাক্সির আলোক কেন্দ্র বা হুনাব কু (Hunab-Kú) কে আবর্তন করে ঘুরতে থাকে ।একটি পূর্ণচক্র কে বলা হয় গ্যালাক্টিক দিন (galactic day)। এই চক্র বা সাইকেল কে দুই ভাগে ভাগ করা হয় আমাদের দিন রাত্রির মতো। কেন্দ্রীয় আলোর যে অংশে আমাদের সৌরমণ্ডল থাকে তাকে দিন এবং যে অর্ধেক বিপরীতে থাকে বা দুরের অংশ কে রাত্রি বলে । প্রতি দিন এবং রাত এর সময় কাল ১২,৮০০ বছর হয়ে থাকে। আমরা বলতে পারি, এই কেন্দ্রীয় গ্যালাক্সি আমাদের সোলার সিস্টেমের জন্য মহাসূর্য স্বরূপ। মায়ানরা আবিস্কার করেছিল যে প্রতিটি মহাচক্রের মাঝে একই গুনাগুনের সম্পন্ন রয়েছে কিছু ছোট ছোট চক্র। একটি গ্যালাক্টিক দিন ২৫,৬২৫ বছর কে ৫,১২৫ বছরের পাঁচটি চক্র বা ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম সাইকেল হচ্ছে গ্যালাক্টিক সকাল (galactic morning)। যখন আমাদের সৌরমণ্ডল অন্ধকার থেকে বের হয়ে আলোতে পৌঁছে। দ্বিতীয় সাইকেল হচ্ছে দুপুর বা দিনের মধ্যভাগ। যখন আমাদের সোলার সিস্টেম তখন কেন্দ্রীয় আলোর খুব কাছাকাছি থাকে। তৃতীয় সাইকেল হচ্ছে পড়ন্ত বিকেল। যখন আমাদের সোলার সিস্টেম আলো থেকে বেরিয়ে আসা শুরু করে। চতুর্থ সাইকেল হচ্ছে গভীর রাত, যখন আমাদের সোলার সিস্টেম কেন্দ্রীয় আলো থেকে সর্বোচ্চ দূরে অবস্থান করে। পঞ্চম এবং শেষ সাইকেল বা চক্রটি হচ্ছে ভোরের এবং আলো ফোটার পূর্বের।

যখন আমাদের সোলার সিস্টেম রাতের অন্ধকারের শেষ চক্রটি অতিক্রম করে আবার দিনের প্রথম চক্রের দিকে অগ্রসর হয়। আমরা বর্তমানে এই পঞ্চম চক্রটিই অতিক্রম করছি। মায়ান ভবিষ্যতবাণী আমাদের বলে যে ১৯৯৯ সাল থেকে 3113 B.C তে শুরু হওয়া সোলার সিস্টেম পঞ্চম সাইকেল অতিক্রম করছে। এবং আমরা ধীরে ধীরে গ্যালাক্টিক দিনের সকালে উপনিত হচ্ছি। আলো আঁধারের মধ্যবর্তী সময় পার করে ২০১২ সালে এক পরিপূর্ণ দিনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। মায়ানরা বলে ৫,১২৫ বছর পর পর এই চক্রের শুরু এবং শেষের সময় কেন্দ্রীয় সূর্য অথবা গ্যালাক্সি অতি উজ্জ্বল এবং অতি সূক্ষ্ম তীব্র আলোক রশ্মি নিঃসরণ করবে যা সমগ্র মহাবিশ্বের আলোকিত করবে। এই সময় সূর্য এবং অন্যান্য গ্রহের সম্মিলন বা অ্যালাইনমেণ্টের ফলে অতি উজ্জ্বল আলোর রশ্মির জন্ম হবে। মায়ানরা এই আলো বিস্ফোরণকে মহাবিশ্বের স্পন্দন হিসাবে চিহ্নিত করেছে যা প্রতি ৫,১২৫ বছরে স্পন্দিত হয়। এই স্পন্দন সঙ্কেতের মাধ্যমে একটি চক্র শেষ হয়ে অন্য চক্র শুরু হয়। প্রতিটি স্পন্দন সঙ্কেতের স্থায়িত্ব ২০ বছর হয় যাকে কাতুন (Katún) বলা হয়। এই সময়কালই হচ্ছে 'The Time of No Time'। এটি এমন এক সময় বা বিবর্তন কাল যা খুব সংক্ষিপ্ত সময়ে অবস্থান করলেও এটি অতি শক্তিশালী অবস্থান যা আমাদের মহাচক্রের মাঝে অবস্থান করে আমাদের মহা পরিবর্তনের এক নতুন যুগের মধ্য দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যায়।


7 টি মায়ান ভবিষ্যতবাণী


মায়ানরা ভৌগোলিক পরিবর্তনের পাশাপাশি তাঁরা মানুষের আধ্যাত্মিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক উত্তরনের কথাও ভবিষ্যতবাণী করেছিলো। নতুন যুগের পরিবর্তনের সাথে আগত নতুন আবহাওয়া, ভুমি, মহাসাগর ও জলবায়ুর সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য পৃথিবীর মানুষকে ঐ রূপান্তরগুলোর ভেতর দিয়ে যেতে হবে।মায়ানরা পৃথিবীর ধ্বংসের কথা বলে নি;তাঁরা বলে সবকিছু বদলে যাবে।একমাত্র শাশ্বত আত্মারই বিকাশ ঘটবে।মানুষের বিবর্তনের মাধ্যমে উচ্চতর আধ্যাত্মিক জগতের দিকে চলছে। 7 টি মায়ান ভবিষ্যতবাণী হচ্ছে মায়ানদের বংশ পরম্পরা ধরে চলা এক গুচ্ছ ভবিষ্যতবাণী। বর্তমানে ৩৩টি মায়া গোত্রে এই বাণী চলে আসছে। আসুন দেখে নেই ভবিষ্যৎবাণী গুলোকে ।
Loading...
Zoom in (real dimensions: 600 x 450)Image

Mayan pyramid of Chichen-Itza El Castillo


প্রথম মায়ান ভবিষৎবাণী

শেষ কাতুন অর্থাৎ ১৯৯৯ সাল থেকে শুরু হওয়া বর্তমান চক্র শেষে মীনযুগের সমাপ্তি হবে। প্রতিটি মানুষ মনের আয়নায় (great room of mirrors )প্রতিফলিত হবে তার নিজের বহুরূপী চরিত্র ।এবং তার সমস্ত আচরণ সে নিজেই পর্যবেক্ষণ করতে পারবে, এই পর্যবেক্ষণ হবে নিজের সাথে, অন্যের সাথে , প্রকৃতির সাথে এবং এই গ্রহের সাথে। আর এই পরিবর্তন শুরু হবে ২২ ডিসেম্বর ২০১২ সাল থেকে।একই সাথে আমাদের ভয় এবং অন্যের প্রতি অশ্রদ্ধার ভাব দূর করবে । সমগ্র মহাবিশ্ব এক অনন্যতার দিকে এগিয়ে যাবে।আমরা প্রবেশ করবো এক নতুন আলোর যুগে।মায়ার ভবিষ্যতবাণী Chilam Balam বলে যে, “...তেরতম ‘Ahau’ (সূর্য) থেকে শেষ কাতুন পর্যন্ত ইত্জা (itzá) গুঁটিয়ে গিয়ে Tanka এর দিকে এগিয়ে যাবে ।তখন সবকিছু অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে। খুব তাড়াতাড়ি মানুষ সূর্যের কাছ থেকে ভবিষ্যত যুগের শুরুর সঙ্কেত পাবে। পৃথিবী পূর্ব থেকে জাগ্রত হবে এবং itzá পশ্চিম থেকে আবার জাগ্রত হবে”। আরও বলা হয়েছে ঃ


“When the Katun 13 Ahau is coming to an end
The sign of the true God on high, there will come to us
The upright beam [the standard of God], it will manifest itself
To light the world.
The union ended, envy ended,
When the bearer of the future sign came to us,
The priest lord,
You shall see it from afar
Coming. The fame of the beam comes
To awaken us. From everywhere …..”
It comes to us. To the power of Itzamna
Approaches our master, Itza.

দ্বিতীয় মায়ান ভবিষৎবাণী


দ্বিতীয় মায়ান ভবিষৎবাণীতে বলা হয় যে প্রতিটি জিনিসের উত্তর মানুষের নিজের মধ্যেই রয়েছে। আমাদের আচার ব্যবহার আমাদের ভবিষ্যৎকে নির্ধারণ করে। এটি আরও বলে যে মানবতা একটি মৌলিক ক্রান্তিকাল পার করছে মহাবিশ্বকে এক নতুন ভাবে উপলব্ধি করার জন্য। এই মহাবিশ্ব এবং সৌরজগৎ এক নতুন ধরনের আলোকরশ্মি গ্রহন করবে, এবং মহাবিশ্বের কেন্দ্র থেকে নতুন ধরনের তথ্য লাভ করবে। এই নতুন আলোকরশ্মি আমাদের গ্রহ থেকে শুরু করে ব্রেন এবং কোষের স্পন্দনকে বৃদ্ধি করবে। নতুন ধরনের ফ্রিকোয়েন্সির সাথে আমাদের সংযোগ ঘটবে এবং এই সংযোগের কারণে আমাদের আচরণেও ব্যাপক পরিবর্তন আসবে।

এই দ্বিতীয় মায়ান ভবিষৎবাণী আমাদের দুইটি পথের সন্ধান দেয়। একটি হচ্ছে বোধগম্যতা এবং সহনশীলতার এবং অন্য পথটি হল ভয় এবং ধ্বংসের। এই দুই পথ থেকেই তাঁরা প্রয়োজনীয় শিক্ষা নিতে পারবে। এই ভবিষ্যতবাণী আমাদের বলে যে মানবতা এক নতুন ধরনের একাত্মতার যুগে পদার্পণ করতে চলছে এবং এই নতুন যুগে পদার্পণ করলে আমাদেরকে অবশ্যই অন্তরের সমস্ত ভয়কে জয় করতে হবে এবং সেখান থেকে কিছু শিখতে হলে আমাদের অবশ্যই যে কোন পরিস্থিতিতে প্রশান্ত থাকতে হবে। সমস্যা যত কঠিনই হোক না কেন, অন্তরের শক্তি দিয়ে আমরা এক উচ্চতর ভাইব্রেশন সৃষ্টি করতে পারবো এবং সমস্যা থেকে মুক্তি পেয়ে সম্মানিত অবস্থায় অবস্থান করবো। এই সময়ে আমরা সমস্ত সৃষ্টিশীল বস্তুর উপর শ্রদ্ধাশীল হতে পারবো।

Loading...
Zoom in (real dimensions: 600 x 372)Image

১৯৯৯ সালের ১১ই আগস্ট এক সূর্যগ্রহণ ঘটবে। এই সূর্যগ্রহনের পর থেকে সমগ্র মানব জাতির আচরণ পরিবর্তন হয়ে যাবে। এবং মানবজাতি এক অভূতপূর্ব কসমিক অ্যালাইনমেণ্টের সম্মুখীন হওয়ার সঙ্কেত পাবে হবে। মায়ানরা বলে সেই সময়ে মানুষ তার আবেগের উপর সহজেই নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারে। বিভিন্ন সময়ে ঝগড়া বিবাদ এড়িয়ে তাঁদের অন্তরেরে প্রশান্তিকে আরও শক্তিশালী করতে পারবে। এই সময়কালে এক সম্মিলিত চেতনার উন্মেষ ঘটবে। আগ্রাসন, ঘৃণা, পারিবারিক বিচ্ছিনতা, বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর মধ্যেকার দ্বন্দ্ব, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক বিচ্ছিন্নতা ইত্যাদি ধীরে ধীরে দূর হয়ে যাবে এবং আমাদের সবাইকে একত্রিত করবে। এই সময়ে অনেক লোক তাঁদের নিজেদের মধ্যে প্রশান্তি খুঁজে পাবেন এবং তাঁদের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে, শ্রদ্ধাশীল হতে পারবে, সহনশীল হতে পারবে, মানব সভ্যতা অন্তর্গত শক্তির নতুন এক উচ্চতর জগতে উঠতে পারবে। হাজার বছর আগে মায়ানদের ১৯৯৯ সালের ১১ই আগস্টের সূর্যগ্রহনের ভবিষ্যতবাণী বাস্তবে পরিণত হয়েছিল। এই তারিখে সহস্রাব্দির শ্রেষ্ঠ একটি সূর্য গ্রহন দেখা গিয়েছিল। এই সূর্যগ্রহণ পর্যায়ক্রমে সারা পৃথিবীর মানুষ দেখতে পেয়েছিল।

তৃতীয় মায়ান ভবিষৎবাণী

তৃতীয় মায়ান ভবিষ্যতবাণী বলে যে, এই সময় মানুষের যুক্তির পরিমান বেড়ে যাবে। মায়ানরা বলে, অতীতে বিভিন্ন জাতি আমাদের প্রকৃতির উপর নানা ভাবে অত্যাচার করার ফলে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। বর্তমান যুগের মানুষও নানাভাবে আমাদের প্রকৃতিকে ধ্বংস করছে। যান্ত্রিক সভ্যতা এবং ব্যাপক দূষণের ফলে এই গ্রহের তাপমাত্রা বেড়ে যাবে এবং ভৌগোলিক অসামঞ্জস্যতা দেখা যাবে। ব্যাপকভাবে পরিবেশ ধ্বংস হওয়ার কারণে সূর্যের তাপমাত্রা বেড়ে যাবে এবং গ্যালাক্সির কেন্দ্র থেকে বেশী শক্তি গ্রহন করার ফলে আমাদের আবহাওয়া এবং জলবায়ু পরিবর্তন ঘটবে। সুতরাং আমাদের গ্রহের উপর আমাদের কাজের প্রভাব সম্পর্কে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে। প্রকৃতির এই সব ক্ষতিকর প্রভাব অসামঞ্জস্যতা এবং দূষণ দূর করার জন্য খুব তাড়াতাড়ি নতুন ধরনের শক্তির ঘূর্ণন (energy vortexes) এর আবির্ভাব ঘটবে। আর এই আবির্ভাবের সঙ্কেত আমরা পেয়ে যাব। হাজার বছরের সমস্ত নেতিবাচক মনোভাব এবং কলুষতাকে ধুয়ে মুছে নিয়ে যাবে এই শক্তি।


চতুর্থ মায়ান ভবিষৎবাণী


চতুর্থ মায়ান ভবিষৎবাণী মানুষকে প্রকৃতির নেপথ্য স্পন্দনের সাথে সংযুক্ত হতে হলে এবং মহাবিশ্বের নতুন যুগের সুচনা করতে অবশ্যই তার ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ বন্ধ করতে হবে, একটি সময় এই জলবায়ুর পরিবর্তন দুই মেরুর বরফ গলিয়ে ফেলবে, এবং এই পরিবর্তন এই আমাদের গ্রহকে আবার সবুজ শ্যামল করে তুলবে এবং আমাদের ভূভাগে ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে আসবে। মানুষের পরিবেশের উপর যে বিরূপ আচরণ এবং অত্যাচারের ফলে যে প্রতিক্রিয়া দেখা যাবে তা সম্বন্ধে চতুর্থ মায়ান ভবিষৎবাণীতে কথা বলা হয়েছে। গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর কারণে সূর্য তখন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তাপমাত্রা বিকিরন করবে তখন সৌর ঝড়ের সৃষ্টি করবে এবং অতিমাত্রায় রেডিয়েশন বিকিরণ করে আমাদের এই গ্রহের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেবে। সূর্যের অতিমাত্রার বিকিরনে দুই মেরুর বরফ গলিয়ে ফেলবে।

তাঁদের এই ভবিষ্যতবাণী বর্তমান সময়ের জন্য একেবারেই সঠিক। কিন্তু মায়ানরা এটি কিভাবে বুঝেছিল?

আমরা জানি সূর্য প্রতিনিয়ত তীব্র চৌম্বক ঝড় (Intense magnetic strom) বা সান স্পটের অভিজ্ঞতা অর্জন করে।বিভিন্ন সাইকেলের ঝড়গুলোর বাড়া কমার উপর ভিত্তি করে আমরা এর শান্ত হওয়ার পর্যায়গুলোকে ভবিষ্যতবাণী করতে পারি।১৬১০ সাল থেকে নিয়মিত ভাবে এই চক্রগুলোকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে । পরিমাপ শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত একেকটি গড়ে ১১ বছর স্থায়ী ২৩টি সান স্পট চক্র সংগঠিত হয়েছে। সর্বশেষটি শুরু হয়েছিল ১৯৯৬ সালের মে মাসে।বিজ্ঞানীরা ২৩ নং চক্রটি ঠিক কবে শেষ হবে তা সম্বন্ধে নিশ্চিত ছিলেন না।২০০৬ সালের ১০ তারিখে নাসা হঠাৎ ঘোষণা করে যে, ২৩ তম সান স্পট শেষ হয়েছে। সৌরশিখা আর চৌম্বক ঝড় থেমে গিয়ে সূর্য শান্ত হয়ে গিয়েছে।একটি সাইকেলের শেষে অন্য সাইকেল শুরু হয় । বর্তমান সান স্পটের আচরণ এবং ১৯৮৬ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যবেক্ষণ করে কলোরাডোর National Center for Atmospheric Research (NACAR) এর মৌসুমি দিকপতি (Mausumi Dikpati)বলেছেন ২৪ নং চক্রটি আগের চক্রের তুলনায় ৩০ থেকে ৫০ ভাগ বেশি শক্তিশালী হবে। পরবর্তীতে National Space Science and Technology Center (NSSTC) এবং NASA এর বিজ্ঞানীরাও এর সাথে একমত হন। তাঁরা হিসেব করে বের করেছেন ২৪ নং চক্রটি ২০১২ সালের শেষ দিকে সবচেয়ে তীব্র ভাবে দেখা দেবে।


Loading...
Zoom in (real dimensions: 481 x 640)Image
ড্রেসডেন কোডেক্স এ মায়ান হায়ারগ্লিফিক্স


মায়ানরা তাঁদের সূর্যকেন্দ্রিক গননা নির্ধারণ করত ৫৮৪ দিনের শুক্রগ্রহের আবর্তনের উপর ভিত্তি করে। শুক্র গ্রহকে সহজেই আকাশে দেখতে পাওয়া যায়। এবং এর অরবিট পৃথিবী এবং সূর্যের মাঝে রয়েছে। মায়ানদের জ্যোতির্বিদ্যা বিষয়ক পর্যবেক্ষণমূলক বই ড্রেসডেন কোডেক্স (Dresden Codex) এ বলা হয়েছে যে, প্রত্যেক ১১৭ আবর্তনের পর শুক্র পুনরায় আকাশের একই স্থানে মিলিত হয়। এবং এর ফলে সূর্যের মধ্যে কিছু পরিবর্তন হয় এবং সৌর বায়ু (solar wind) বের হওয়ার কারণ ঘটায়। তাঁরা সতর্ক করে যে ৫,১২৫ বছর পরপর সূর্যের মধ্যে আরও ব্যাপক পরিবর্তন ঘটতে পারে। তখন মানুষ কে আরও অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে। এটি পরিবর্তনের এবং ধ্বংসের সূচনার প্রতীক।

পঞ্চম মায়ান ভবিষৎবাণী


মায়ানদের বিভিন্ন ভবিষ্যৎবাণী আমাদের বিভিন্ন ঘটনাক্রম বর্ণনা করে.এই ভবিষৎবাণী আমাদের বলে যে যে সমস্ত সিস্টেম বা পদ্ধতি আমাদের সভ্যতাকে প্রভাবিত করে এবং ভয়ের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে তা নতুন যুগে পরিবর্তিত হয়ে যাবে। আমাদের মহাবিশ্ব নতুন বাস্তবতার ঐকতানে এক ধাপ এগিয়ে যাবে। আমাদের তৈরি সমস্ত সিস্টেম মানবতার পক্ষে দাঁড়াতে ব্যর্থ হবে, অর্থ তার বিনিময় যোগ্যতা হারাবে, স্রষ্টাকে অনুভব করার বিভিন্ন পথ একত্রিত হয়ে সকলের কাছে গ্রহণীয় একক আধ্যাত্মিক পথের উন্মেষ ঘটবে।

Chilam Balam (the Jaguar Priest, 1168 AD) এর ভবিষ্যতবাণীতে বলা হয়েছে ঃ

“Your brother is coming now.
Receive your bearded guests from the east,
Bearers of the standard of God.
Receive the word of God which
Comes to us on the day of resurrection
Which is feared by all in the world, Lord
You are the unique God who created us
Take advantage of the word of God
Whose sign you raise on high
Whose beam you raise upright
That you raise upright so that it may be seen
It changes the splinters that come out of it
It changes them after the rainbow appears
Shown throughout the world,
It is the sign of the true God of heaven.
That is the one you shall worship, Itzas
You are going to worship its ensigns on high
You are going to worship the true faith
You are going to worship the True God
Believe the word of the One God,
For his word came from heaven,
And it counsels you, Itzas.
It awakens the world, makes them believe.
Within another Katun
I wept for my words, I, Chilam Balam
When I explained the word of the True God
Lord forever over the earth. ”

নতুন গ্যালাক্টিক দিনের মুখোমুখি হবে প্রতিটি ধর্ম এবং গোত্র, পরিণত হবে শান্তি, সৌহার্দ্য এবং ইতিবাচকতার যুগ হিসেবে। সুতরাং যাই কিছু এই অবস্থানকে সমর্থন করবে না তা পরিবর্তন অথবা বিলীন হয়ে যাবে। নতুন যুগে যোগাযোগের জন্য কোন মাধ্যমের প্রয়োজন থাকবে না। সবাই মানসিক ভাবে সংযুক্ত থাকবে। একে অপরের কথা এমনিতেই বুঝতে পারবে। যার ফলে কোন সহিংসতারও অস্তিত্ব থাকবে না। পঞ্চম ভবিষ্যতবাণী আমাদের পরিষ্কার ভাবে বলে যে, দেশের শীর্ষ স্থানীয় নেতারা জনগনের আশা আকাঙ্ক্ষা এবং প্রয়োজনীয়তার দিকে নজর না দিয়ে নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নের দিকে বেশি ব্যস্ত থাকবে। এই লোভ এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষা দেশের রাজনীতির ক্ষতির বা সন্মানহানির কারণ হবে। প্রতিটি স্তরে এই ক্ষমতার অপব্যাবহারের ফলে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। এই অন্ধকার যুগে সমাজের এই নৈতিক অবক্ষয়, সার্বিক বিশৃঙ্খলাতা এবং নিচু মানসিকতা আমাদের প্রস্তুত এবং বাধ্য করবে এক নতুন যুগে সুসম্পর্ক এবং ভাল আচরণ করতে


ষষ্ঠ মায়ান ভবিষৎবাণী


Loading...Image

এই ভবিষৎবাণী বলে যে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে একটি ধুমকেতু বা গ্রহানুর আবির্ভাব ঘটবে। যার কক্ষপথ আমাদের অস্তিত্তের উপর হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। ১৯৮৩ সালের ২৬ জানুয়ারী এই ধরনের একটি গ্রহানু আবিষ্কার করা হয়েছে যার দেয়া হয়েছে প্ল্যানেট x বা নিবিরু (Nibiru)। ২০১১ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারি নাসার wide –field Infrared Survey Explorer (WISE) টেলিস্কোপ একে গ্রহ হিসাবে সনাক্ত করে এবং এর নাম দেয়া হয় Tyche বা Hercolubus।এটি আকারে বৃহস্পতির চারগুন এবং সৌরমণ্ডলের বাইরের কিনারা জুড়ে প্রদক্ষিণ করছে। বিশেষজ্ঞদের হিসাব অনুযায়ী, ২০১১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বরে এটি পৃথিবীর ২২ মিলিয়ন মাইলের ভেতর চলে আসবে।CNN এ Surviving 2012 & Planet X নামে একটি ডকুমেন্টারিতে বেশ কিছু সাইন্টিফিক রিপোর্ট দেখানো হয়। মায়ানরা ধুমকেতু এবং গ্রহাণুকে পরিবর্তনের নিয়ামক হিসেবে গণ্য করে। এটি একটি ভারসাম্য থেকে অন্য ভারসাম্যে উপনিত হতে এবং কিছু কিছু বস্তুকে পরিবর্তন করতে সহায়তা করে। যার ফলে সম্মিলিত চেতনার পরিবর্তন ঘটে যায়।

Loading...
Zoom in (real dimensions: 650 x 298)Image

মায়ানরা বলে, প্রতিটি বস্তু নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করে। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিও অনেক সময় জীবনকে জানার এবং অনুভব করার সুযোগ করে দেয় এবং এটি সৃষ্টির মূল কারণ সম্পর্কে অনুভব করা আরও এক ধাপ এগিয়ে দেয়। এই কারনেই মানুষ প্রতিনিয়ত অপ্রত্যাশিত ঘটনা এবং দুঃখ কষ্টের সম্মুখীন হয়। এবং এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয় যাতে মানুষ অন্যদের সঙ্গে এবং মহাবিশ্বের সাথে সুসম্পর্কের প্রতিফলন ঘটাতে পারে। এইভাবে অনেকগুলো জীবনকাল পরে যাতে সে বুঝতে পারে সৃষ্টির সার্বজনীন আইনকে। মায়ানরা বল স্রষ্টার উপস্থিতি যে জীবনের সব ধরনের মধ্যে আছে, এবং তার অস্তিত্ব অসীম, মায়ানদের মতে এই মানুষের বিবর্তনের এই ইতিহাস মহাজাগতিক সময়হীনতার আইনকে (laws of cosmic timelessness.) নিয়ন্ত্রণ করে। সুতরাং সময় যেভাবে চক্রাকারে পরিবর্তিত হয় তেমনি মানুষের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাও প্রকৃতির পুনরাবৃত্তির চক্রে চলমান থাকে। আমাদের সম্মুখেই রয়েছে এবং ভবিষ্যৎ (Tza‘ ani) ইতিমধ্যে ঘটে গিয়েছে, সুতরাং আমরা ভবিষ্যৎ সম্পর্কে খুব সহজেই বলতে পারি। Tza‘ ani” এর অনুবাদ করা হয়েছে “ভবিষ্যৎ” কিন্তু এর আক্ষরিক অনুবাদ হচ্ছে “পেছনে কি রয়েছে”। বর্তমান যুগে আমরা আধুনিক যন্ত্রপাতির কল্যানে জানি যে, মহাকাশে লক্ষ কোটি গ্রহানু রয়েছে। মাঝে মাঝেই এরা পৃথিবীর কাছে এসে পড়ে। আপাত দৃষ্টিতে নিরীহ এই মহাজাগতিক বড় বড় গ্রহানু গুলো এবং উল্কা পৃথিবীর অভিকর্ষ বলের কারণে যে কোন সময়ে পৃথিবীর উপর এসে পড়তে পারে। মায়ানরা আগে থেকেই জানত যে, পরবর্তী যুগের মানুষ এই বৃহৎ গ্রহানু যে আমাদের ধ্বংস করে দিতে পারে তা আগে ভাগেই জানতে পারবে। এবং এই গ্রহানুর পথ গুলো পৃথিবীর উপর আঘাত করতে না পারে সেজন্য তাঁরা আগে ভাগেই এর পথ পরিবর্তন করতে পারবে। এই বিপদজনক সময়ে সমস্ত মানুষ একত্রে একই মানসিকতার একটি জাতিতে পরিণত হবে।

সপ্তম মায়ান ভবিষ্যৎবাণী


Loading...
Zoom in (real dimensions: 600 x 373)Image


সপ্তম ভবিষ্যৎবাণী বলে, আমাদের সোলার সিস্টেম মহাজাগতিক চক্র অনুসারে রাতের অন্ধকার ছাড়িয়ে মহাজাগতিক ভোরে উপনিত হচ্ছে। কেন্দ্রীয় গ্যালাক্সি কোর বা Hunab-ku থেকে নিঃসরিত আলো মানুষের জেনেটিক কোডকে সক্রিয় করে উচ্চতর চেতনায় অবতীর্ণ করবে। সমস্ত জীবন্তবস্তু কে স্বেচ্ছায় অভ্যন্তরীণ ভাবে রূপান্তর করে এক নতুন বাস্তবতার সৃষ্টি করবে। এর ফলে আমরা সবাই পরিবর্তন হবার সুযোগ পাবো। এবং নতুন এক চেতনা গ্রহন করে আমাদের সমস্ত সীমাবদ্ধতা এবং শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়ে অনুভবের সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছব। যারা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে তাঁদের মধ্যে প্রশান্তি খুঁজে পাবে, ভয়কে ভালবাসার শক্তিতে পরিণত করতে পারবে তাঁরা চিন্তার মাধ্যমে সংযুক্ত হয়ে নিজেদের পরিপূর্ণভাবে বিকশিত করতে পারবে। এই চেতনা আমাদের সমস্ত মানুষের বিবেক এবং অন্তর্গত চেতনা এবং সম্মিলিত চেতনা বলয় (collective consciousness) বর্ধিত করে, অনন্য মানুষ এ রূপান্তরিত করবে। এই গ্রহে সব চেয়ে বড় পরিবর্তন ঘটে যাবে।সমস্ত মানুষ একে অপরের সাথে সংযুক্ত থাকবে যেন মনে হবে তাঁরা সবাই একই সত্তা একই আত্মা, নতুন এক সত্তার জন্ম হবে আমাদের এই গ্যালাক্টিক অর্ডারে।
বর্তমান মায়ানরা নানা ভাবে দুইবেলা হুনাব কু এর কাছে প্রার্থনা করে। প্রতিদিন তাঁরা ভোরে তাঁরা বলে ঃ


“With the rising of the Sun we receive your words, Master.
Because with your light we awaken to contemplate everything.
We also contemplate ourselves because we are your children.
This is why at dawn we surrender ourselves to you.
So that you may protect us and teach us your wisdom.
It is why we surrender to you, Father and Master Hunab K'U.
And we surrender our children,
Just as our parents surrendered us to you.
Master Hunab K'U, you know what yo make of us
We ask you, Master Hunab K'U, to regain fraternal love.
We ask this of you, Master, Giver of Movement and Measure, so that wee do not lose ourselves. Oh Master, Hunab K'U!”

প্রত্যেকের লাখো কোটি মানুষের আলাদা আলাদা চেতনা সম্মিলিত চেতনার রূপ নিয়ে এক নতুন চেতনার জন্ম দেবে। তাঁরা তখন সবাই জানতে পারবে যে তাঁরা এক মহা চেতনারই এক ক্ষুদ্র অংশ। প্রত্যেকে মনের কথা বোঝার সক্ষমতার কারণে মানব সভ্যতায় এক মহা বিপ্লব শুরু হয়ে যাবে। সব ধরনের আসক্তি, স্বার্থপরতা, মিথ্যা দূরীভূত হবে এবং কেউ কোন কিছু গোপন করতে পারবে না। নতুন এক স্বচ্ছতা এবং আলোর যুগ শুরু হবে যেখানে কোন সহিংসতা এবং নেতিবাচকতার অস্তিত্ব থাকবে না। দেশের প্রচলিত আইন এবং দেশরক্ষা বাহিনীর কোন প্রয়োজন থাকবে না। প্রতিটি মানুষ তার কর্মের জন্য দায়ী থাকবে। অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং দায়িত্ব পালন করার জন্য শক্তি প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা থাকবে না। পৃথিবীর সমস্ত আলোকিত এবং জ্ঞানী মানুষের সমন্বয়ে যৌথ সরকার গঠিত হবে। দেশে দেশে কোন সীমান্ত থাকবে না , জাতী বর্ণ এর ধর্ম গোত্রের কোন বিভেদ থাকবে না , কোন ধরনের করের (tax) কোন প্রয়োজন পড়বে না। বিনিময়ের মাধ্যম হিসাবে অর্থের কোন প্রয়োজন থাকবে না। নতুন নতুন প্রযুক্তি সাধারন মানুষের কল্যাণে ব্যবহৃত হবে। দরিদ্রতা নির্মূল হয়ে যাবেও। ব্যক্তিগত সম্পত্তির কোন প্রয়োজন থাকবে না। হাজার বছরের বিচ্ছিন্নতা শেষ করে মানুষ আবার একত্রিত হবে এক নতুন স্বর্গীয় গ্যালাক্টিক যুগে।

Post Top Ad

Your Ad Spot

প্রয়োজনীয়