Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

Sunday, February 22, 2015

বাংলা ভাষা ও চির অমলিন সেই পাঁচ শহীদের গাঁথা




সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার গানে কবিতায় বা ইতিহাসে বার বার পড়েছি আমরা সেই নামগুলি। কিন্তু এ চারজন ছাড়াও শহীদ হয়েছিলেন সেদিন আরও একজন। নাম তার শফিক। কেনো যেন সেই নামটা বার বারই উপেক্ষিত রয়ে গেছে গানে, কবিতায় বা লোকমুখে।

তবে এখন তো বইমেলা চলছে এবং বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনে শহীদদের ভাস্কর্যের দিকে খেয়াল করলেই দেখা যাবে শফিক নামে এই ভাষা শহীদের মূর্তী আর চারজন ভাষা শহীদের পাশেই খোদাই করা আছে। যদিও শফিক বলেই তিনি পরিচয় পেয়েছিলেন কিন্তু তার নাম শফিক নয়,তার নাম শফিউর। সরকারী নিবন্ধে তার নাম লিপিবদ্ধ রয়েছে শফিক নামে!


আবুল বরকত
১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি। ঢাকা মেডিকেল কলেজের সম্মুখের রাস্তায় বাংলাভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছিলেন ছাত্র-জনতা । এমন সময় পুলিশ গুলি চালালে হোস্টেলের ১২ নম্বর শেডের বারান্দায় গুলিবিদ্ধ হন আবুল বরকত। ঢাকা মেডিকেল কলেজের হাসপাতালে জরুরি বিভাগে ভর্তি অবস্থায় রাত আটটার দিকে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। আজিমপুর গোরস্তানের এক সমাধিতে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন এই ভাষা শহীদ আবুল বরকত।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। আগের বছর রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বিএ পাশ করে সে বছর ভর্তি হয়েছিলেন অনার্সে। ৫২ থেকে পরের প্রতি বছর ভাষা শহীদদের নিয়ে যাবতীয় অনুষ্ঠানে তার মা- বাবা এবং আত্মীয়রা উপস্থিত থেকেছেন অতিথি হিসেবে,স্মৃতিচারণ করেছেন তাদের নিহত স্বজনেরা। ১৯৫৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারের আনুষ্ঠানিক ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপনের অনুষ্ঠানেও প্রধান অতিথি ছিলেন বরকতের মা হাসিনা বেগম।
এক নজরে ভাষা শহীদ আবুল বরকত
জন্ম : ১৬ই জুন, ১৯২৭ ইং ৷
জন্মস্থান : ভারতের পশ্চিম বঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দি মহাকুমার ভরতপুর থানার বাবলা গ্রামে ৷
মৃত্যু : ২১ ফেব্রুয়ারী, ১৯৫২ সাল ৷
সমাধি স্থল : ঢাকার আজিমপুর পুরানো কবরস্থানে ৷

আবদুল জব্বার
১৯৫২ সালের ২০শে ফেব্রুয়ারী আবদুল জব্বার ঢাকায় এসেছিলেন ক্যান্সারে আক্রান্ত শাশুড়িকে নিয়ে। শ্বাসুড়িকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ছাত্র ব্যারাকে গফরগাঁও নিবাসী হুরমত আলীর রুমে (২০/৮) উঠেছিলেন। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্দোলনরত ছাত্রদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হলে কৌতুহলী হয়ে তিনি বাইরে বের হয়ে আসেন। তখনই পুলিশ গুলি শুরু করে এবং জব্বার আহত হন। ছাত্ররা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা জব্বারকে মৃত ঘোষণা করেন।
এক নজরে ভাষা শহীদ আবদুল জব্বার
জন্ম : ১০শে অক্টোবর ১৯১৯ইং বা বাংলা ২৬শে আশ্বিন ১৩২৬ বঙ্গাব্দ ৷
জন্মস্থান : ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার পাঁচুয়া গ্রামে ৷
মৃত্যু : ২১ ফেব্রুয়ারী, ১৯৫২ সাল ৷
সমাধি স্থল : ঢাকার আজিমপুর পুরানো কবরস্থান ৷

রফিকউদ্দিন আহমদ
বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ১৯৫২-র ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজের সম্মুখের রাস্তায় ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে বিক্ষোভ প্রদর্শনরত ছাত্র-জনতার মিছিলে ছিলেন রফিক। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হোস্টেল প্রাঙ্গনে পুলিশ গুলি চালালে সেই গুলি রফিকের মাথায় লাগে।ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। রাত তিনটায় সামরিক বাহিনীর প্রহরায় ঢাকার আজিমপুর গোরস্তানে শহীদ রফিকের লাশ দাফন করা হয়।
ইতিহাস বলে ভাষার জন্য প্রথম শহীদ হয়েছেন রফিক। ভীষন মর্মান্তিক তার কাহিনীটি। মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরের পারিল গ্রামে যা এখন রফিকনগর হিসাবে পরিচিত সেখানে বাড়ি তার। তিনি ঢাকা এসেছিলেন বিয়ের বাজার করতে। একই গ্রামের মেয়ে রাহেলা খাতুন পানুর সঙ্গে প্রেম, দ্বন্দ অবশেষে পারিবারিকভাবে এই সম্পর্ককে দুপক্ষ মেনে নেবার পর বিয়ের কথা পাকাপাকি হয়। ২০ তারিখ রফিক ঢাকা আসেন, বিয়ের শাড়ি, গহনা এবং আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র কিনেন। ২১ তারিখ সন্ধ্যায় তার বাড়ি ফেরার কথা ছিলো।গুলি খাওয়ার পর রফিকের লাশ মেডিকেল হোস্টেলের বারান্দায় পড়ে ছিলো। অর্থাৎ তিনি রাস্তায় গুলিবিদ্ধ হননি। তাহলে কি তিনিও জব্বারের মতো হোস্টেলে কারো অতিথি হয়ে এসেছিলেন! সুস্পস্টরূপে জানা নেই সেই ইতিহাস। শুধু তাই নয়। ভাষা শহীদদের মধ্যে তার কবরটিই অচিহ্নিত রয়ে গেছে। সে রাতে তড়িঘড়ি তাকে আজিমপুরে সমাধিস্থ করা হয় ঠিকই কিন্তু ঠিক কোন জায়গায় সেটা আর বের করা হয়নি।
এক নজরে ভাষা শহীদ রফিক
জন্ম : ৩০শে অক্টোবর ১৯২৬ সাল ৷
জন্মস্থান : পারিল গ্রাম, ইউনিয়ন-বলধারা, থানা-সিঙ্গাইর,মানিকগঞ্জ।
মৃত্যু : ২১ ফেব্রুয়ারী, ১৯৫২ সাল ৷
সমাধি স্থল : ঢাকার আজিমপুর কবরস্থানের হাজারো কবরের ভীড়ে। যে কবরের চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায়নি ৷

আবদুস সালাম
২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজের সম্মুখের রাস্তায় ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে ভাষা আন্দোলনের বিক্ষোভে অংশ নেন তিনি। পুলিশ গুলি চালালে আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়। দেড় মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর ৭ এপ্রিল, ১৯৫২ তারিখে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
ভাষা শহীদ আবদুস সালাম
জন্ম : ১৯২৫ সাল ৷
জন্মস্থান : ফেনী জেলার দাগনভুঁইঞা উপজেলার লক্ষণপুরে।
মৃত্যু : ২৫ ফেব্রুয়ারী, ১৯৫২ সাল, সরকারী গেজেটে ৭ই এপ্রিল ১৯৫২ ৷
সমাধি স্থল : ঢাকার আজিমপুর পুরানো কবরস্থানে ৷

শফিউর রহমান
শফিউর ছিলেন হাইকোর্টের হিসাব রক্ষণ শাখার কেরানী। ১৯৫২ এর ২২ ফেব্রুয়ারি সকাল দশটার দিকে ঢাকার রঘুনাথ দাস লেনের বাসা থেকে সাইকেলে চড়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন শফিউর। সকাল সাড়ে দশটার দিকে নওয়াবপুর রোডে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে পূর্বদিনের পুলিশের গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ পুণরায় গুলিবর্ষণ করে। পুলিশের গুলি শফিউর রহমানের পিঠে এসে লাগে। আহত অবস্থায় তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়। তাঁর শরীরে অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ত্রোপচার সফল না হওয়ায় ঐদিন সন্ধ্যা সাতটায় মৃত্যুবরণ করেন। ২২ ফেব্রুয়ারি'র মধ্যরাতে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়। তাঁর কবরের পাশেই রয়েছে শহীদ আবুল বরকতের সমাধি।
জন্ম : ২৪ জানুয়ারী ১৯১৮ সাল ৷
জন্মস্থান : কোননগর, হুগলী, চব্বিশ পরগণা, পশ্চিমবঙ্গে জন্মগ্রহণ করেন।
মৃত্যু : ২২ ফেব্রুয়ারী, ১৯৫২ সাল ৷
সমাধি স্থল : ঢাকার আজিমপুর পুরানো কবরস্থানে ৷

২২শে ফেব্রুয়ারীতে রাথখোলা, নবাবপুরে নিহত হয়েছিলেন আরও দু‌জন এরা হলেন:-

১. অহিউল্লা, পিতা রাজমিস্ত্রি হাবিবুর রহমান বয়স:-৯ বৎসর
২. আব্দুল আউয়াল একজন রিক্সা চালক বয়স:-২৬ বৎসর।



ভাষা আন্দোলন-
১৯৪৭ সালে ভারতের সাথে দেশ ভাগের পর ভাষা, সংস্কৃতি ও ভৌগলিক অবস্থান ভিন্ন হওয়া সত্ত্বেও শুধু মাত্র ধর্মীয় সংখ্যা গরিষ্ঠতার উপর ভিত্তি করে পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান দুটি সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন অঞ্চল নিয়ে পাকিস্তান একটি রাষ্ট্র গঠিত হয়। জনসংখ্যার দিক দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তান সংখ্যালঘু হওয়া সত্ত্বেও সিভিল সার্ভিস, মিলিটারী ও গুরত্বপূর্ণ সব রাষ্ট্রীয় পদে তাদের আধিপত্য বেশী ছিল। ক্রমে তারা নিজেদের শাসনকর্তা ও বাঙ্গালীদের প্রজা ভাবতে শুরু করলেন। নব গঠিত রাষ্ট্রের শিক্ষা ব্যবস্থা ও রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য তারা উর্দূ ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করতে থাকেন। এই পরিকল্পনার কথা জানতে পেরে ঢাকায় ঢাকায় "তমদ্দুন মজলিশের" সেক্রেটারী অধ্যাপক আবুল কাসেমের নেতৃত্বে এক প্রতিবাদ সভা ও রালি বের করা হয় এবং সভায় বাংলাকে উর্দূর পাশাপাশি রাষ্ট্রভাষা করার দাবী করা হয়। এবং এই অবস্থার প্রেক্ষিতে ১৯৪৭ এর ডিসেম্বর মাসে "রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ" গঠন করা হয়। তারপরও তাদের ষড়যন্ত্র চলতে থাকে।
পাকিস্তান সরকারের বিভিন্ন আত্নকেন্দ্রিক সিদ্ধান্তের কারনে আবারো সোচ্চার হয়ে উঠে বাঙ্গালী ফলে ১১ই মার্চ ১৯৪৮ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার দাবীতে পুনরায় মিছিল করা হয় এতে..শেখ মুজিবর রহমান, কাজী গোলাম মাহাবুব, অলি আহাদ, শওকত আলী, সামসুল হক প্রমূখ গ্রেফতার হন। তারপর ২১শে মার্চ ১৯৪৮ সালে ঢাকার রেস র্কোস ময়দানে তৎকালিন গভর্ণর জেনারেল মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ দৃঢ় ভাষায় ঘোষনা করেন "উর্দূ, এবং উর্দূই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা"। আবারো সোচ্চার হয়ে উঠে বাঙ্গালী, এমন সিদ্ধান্ত কখনো মানবো না এই দাবী উঠে সারা বাংলায়। এভাবে আরো ৪ বৎসর অতিবাহিত হয় তারপরও পশ্চিম পাকিস্তানীদের ষড়যন্ত্র থামেনা। ২৭শে জানুয়ারী ১৯৫২ সাল পাকিস্তানের নব নিযুক্ত গর্ভণর জেনারেল খাজা নাজিম উদ্দিন ঢাকায় এসে পুনরায় ঘোষনা দেন "উর্দূই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা"। এই ঘোষনা শুনার পর গর্জে উঠে বাঙ্গালী জাতি, প্রতিবাদে জ্বলে উঠে সারা বাংলা। ২১শে ফেব্রুয়ারী সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ র্কতৃক বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবীতে হরতালের ডাক দেওয়া হয়।
২১শে ফেব্রুয়ারী ১৯৫২ সাল ৮ই ফাল্গুন ১৩৫৯ বঙ্গাব্দ সকাল ৯টা হতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জড়ো হতে লাগলো ছাত্র জনতা। ঐতিহাসিক আমতলা তখন লোকে লোকারণ্য। পাকিস্তান সরকার ঐ দিন ঢাকায় ১৪৪ ধারা ঘোষনা করেন। একসময় সমবেত ছাত্র জনতা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন এবং গাজীউল হকের নেতৃত্বে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে সবাই মিছিল নিয়ে ঢাকা মেডিকেলের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। মিছিল যখন ঢাকা মেডিক্যালের কাছাকাছি আসে তখন শুরু হয় পুলিশের এলোপাতাড়ি গুলোগুলি। গুলিতে সাথে সাথে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন রফিক, জব্বার, সালাম ও বরকত।
২২শে ফেব্রুয়ারী সকালে রাতখোলা নবাবপুরে ২১শে ফেব্রুয়ারীতে গুলিতে শহীদের জন্য প্রতিবাদ সভা ও মিছিল বের করা হয় এতে পুলিশের র্নিবিচারে গুলি আরম্ভ হয়....ঐ গুলিতে শহীদ হন শফিউর রহমান এবং ৯ বৎসর বয়সী অহিউল্লা পিতা রাজমিস্ত্রি হাবিবুর রহমান ও রিক্সা চালক ২৬ বৎসর বয়সী আব্দুল আউয়াল।

শহীদের জানাযায় জনতার র‌্যালী
জীবনের বিনিময়ে জিনে নেওয়া বাংলা ভাষা এমন ইতিহাস আর পৃথিবীর কোথাও নেই। প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুয়ারী বা ৮ই ফাল্গুন এই দিনটি আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে পৃথিবীর সব দেশ একযোগে পালন করা হয়। ১৭ই নভেম্বর ১৯৯৯ সালে ইউনোস্কো ২১শে ফেব্রুয়ারীকে আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে স্বীকৃতি দেন এবং ২০০০ সাল থেকে সারা বিশ্বে এই দিবসটি আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।

প্রথম শহীদ মিনার
১৯৫২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ শুরু করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা। খুব তড়িঘড়ি রাত্রির মধ্যে সেই নির্মান কাজ সম্পন্নঝয়। শহীদ বীরের স্মৃতিতে - এই শিরোনামে দৈনিক আজাদ পত্রিকায় ছাপা হয় শহীদ মিনারের খবর।
মিনারটি তৈরি হয় মেডিকেলের ছাত্র হোস্টেলের বার নম্বর শেডের পূর্ব প্রান্তে। শহীদ মিনারটি ছিল ১০ ফুট উচ্চ ও ৬ ফুট চওড়া। মিনার তৈরির তদারকিতে ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার শরফুদ্দিন। ডিজাইন করেছিলেন বদরুল আলম। সাথে ছিলেন সাঈদ হায়দার। তাদের সহযোগিতা করেন দুইজন রাজমিস্ত্রী। মেডিকেল কলেজের সম্প্রসারণের জন্য জমিয়ে রাখা ইট, বালি এবং পুরান ঢাকার পিয়ারু সর্দারের গুদাম থেকে সিমেন্ট আনা হয়। ভোর হবার পর একটি কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় মিনারটি। ঐ দিনই অর্থাৎ ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে, ২২ ফেব্রুয়ারির শহীদ শফিউরের পিতা অনানুষ্ঠানিকভাবে শহীদ মিনারের উদ্বোধন করেন। ২৬ ফেব্রুয়ারি সকালে দশটার দিকে শহীদ মিনার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন আজাদ সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দিন। উদ্বোধনের দিন অর্থাৎ ২৬ ফেব্রুয়ারি পুলিশ ও সেনাবাহিনী মেডিকেলের ছাত্র হোস্টেল ঘিরে ফেলে এবং প্রথম শহীদ মিনার ভেঙ্গে ফেলে। এরপর ঢাকা কলেজেও একটি শহীদ মিনার তৈরি করা হয়, এটিও একসময় সরকারের নির্দেশে ভেঙ্গে ফেলা হয়।

অবশেষে, বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দেবার পরে ১৯৫৭ সালের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের কাজ শুরু হয়। এর নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির তত্ত্বাবধানে।
১৯৫৬ সালের ২১শে ফ্রেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের অন্যতম শহীদ রিক্সাচালক আওয়ালের ৬ বছরের মেয়ে বসিরণকে দিয়ে এ স্মৃতিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়।

বাংলাদেশের বিখ্যাত চিত্রশিল্পী হামিদুর রহমান মহান ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত শহীদ মিনারের স্থপতি হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছেন।তাঁরই রূপকল্পনা অনুসারে নভেম্বর, ১৯৫৭ সালে তিনি ও নভেরা আহমেদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে সংশোধিত আকারে শহীদ মিনারের নির্মাণ কাজ কাজ শুরু হয়। এ নকশায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেলের সম্মুখভাগের বিস্তৃত এলাকা এর অন্তর্ভূক্ত ছিল। ১৯৬৩ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের অন্যতম শহীদ ব্যক্তিত্ব আবুল বরকতের মা হাসিনা বেগম নতুন শহীদ মিনারের উদ্বোধন করেন।

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারী
আমি কি ভুলিতে পারি - একুশের সেই অমর সঙ্গীত-
একুশের এই অমর সঙ্গীতটি একটি খবরের কাগজের শেষের পাতায় একুশের গান শিরোনামে প্রথম প্রকাশিত হয়। তখন গীতিকারের নাম জানানো হয়নি। ১৯৫৪ সালে হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত একুশে সংকলনে প্রকাশিত হয় গানটি। তৎকালীন সরকার সংকলনটি বাজেয়াপ্ত করে।

গানটি রচনার ইতিহাস
শুরুতে এটি কবিতা হিসেবে লেখা হয়েছিল। তৎকালীন যুবলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক কবিতাটি আব্দুল লতিফকে দিলে তিনি এতে সুরারোপ করেন। পরবর্তীতে, লতিফ আতিকুল ইসলাম প্রথম গানটি গান। ঢাকা কলেজের কিছু ছাত্র কলেজ প্রাঙ্গনে শহীদ মিনার স্থাপনের চেষ্টা করার সময়ও গানটি গেয়েছিল। একারণে তাদেরকে কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
পরবর্তীতে আলতাফ মাহমুদ, যিনি সে সময়কার একজন নামকরা সুরকার এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের এক বীর মুক্তিযোদ্ধা, তিনি গানটিতে পুনরায় সুরারোপ করেন। বর্তমানে এটিই গানটির প্রাতিষ্ঠানিক সুর হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। প্রতিবছর ২১শে ফেব্রুয়ারিতে ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে একুশে ফেব্রুয়ারির প্রভাত ফেরীতে এই গান গেয়ে প্রতিটি বাঙ্গালী শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। গানটি রচয়িতা আব্দুল গাফফার চৌধুরী এবং প্রথম সুরারোপ করেন আব্দুল লতিফ। কিন্তু পরবর্তীতে সুরকার আলতাফ মাহমুদ গানের সুরে পরিবর্তন আনেন। বর্তমানে আলতাফ মাহমুদের সুর করা গানটিই গাওয়া হয়। বিবিসি শ্রোতা জরিপে বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ গানের তালিকায় এটি তৃতীয় স্থান লাভ করেছে।


সম্পূর্ণ গানঃ আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো
সুরকারঃ শহীদ আলতাফ মাহমুদ
গীতিকারঃ আব্দুল গাফফার চৌধুরী

আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি
ছেলেহারা শত মায়ের অশ্রু গড়ায়ে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি
আমার সোনার দেশের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি।।
জাগো নাগিনীরা জাগো নাগিনীরা জাগো কালবোশেখীরা
শিশু হত্যার বিক্ষোভে আজ কাঁপুক বসুন্ধরা,
দেশের সোনার ছেলে খুন করে রোখে মানুষের দাবী
দিন বদলের ক্রান্তিলগ্নে তবু তোরা পার পাবি?
না, না, না, না খুন রাঙা ইতিহাসে শেষ রায় দেওয়া তারই
একুশে ফেব্রুয়ারি একুশে ফেব্রুয়ারি।।
সেদিনও এমনি নীল গগনের বসনে শীতের শেষে
রাত জাগা চাঁদ চুমো খেয়েছিল হেসে;
পথে পথে ফোটে রজনীগন্ধা অলকনন্দা যেন,
এমন সময় ঝড় এলো এক ঝড় এলো খ্যাপা বুনো।।
সেই আঁধারের পশুদের মুখ চেনা,
তাহাদের তরে মায়ের, বোনের, ভায়ের চরম ঘৃণা
ওরা গুলি ছোঁড়ে এদেশের প্রাণে দেশের দাবীকে রোখে
ওদের ঘৃণ্য পদাঘাত এই সারা বাংলার বুকে
ওরা এদেশের নয়,
দেশের ভাগ্য ওরা করে বিক্রয়
ওরা মানুষের অন্ন, বস্ত্র, শান্তি নিয়েছে কাড়ি
একুশে ফেব্রুয়ারি একুশে ফেব্রুয়ারি।।
তুমি আজ জাগো তুমি আজ জাগো একুশে ফেব্রুয়ারি
আজো জালিমের কারাগারে মরে বীর ছেলে বীর নারী
আমার শহীদ ভায়ের আত্মা ডাকে
জাগো মানুষের সুপ্ত শক্তি হাটে মাঠে ঘাটে বাটে
দারুণ ক্রোধের আগুনে আবার জ্বালবো ফেব্রুয়ারি
একুশে ফেব্রুয়ারি একুশে ফেব্রুয়ারি ।।


ভাষা আন্দোলনের আরও তথ্য ও ছবি সমৃদ্ধ একটি লেখা
Click This Link


তথ্যসুত্র ও ছবি-
উইকিপিডিয়া
একুশের ইতিহাস আমাদের ইতিহাস- আহমেদ রফিক
Click This Link


সকল বাংলা ভাষাভাষী ভাই ও বোনদের জন্য সেই হৃদয়ের গান-
https://www.youtube.com/watch?v=zBU4sNjMiCg


সবশেষে শহীদদের উদ্দেশ্যে

কেউ কখনও পারবেনা দিতে

Post Top Ad

Your Ad Spot

প্রয়োজনীয়