তুলসীর উপকারিতার কথা কে না জানে। সর্দি, কাশি, ঠাণ্ডাজনিত সকল রোগের ঔষধ এই তুলসী। তুলসীর বৈজ্ঞানিক নাম ওসিমাম স্যাঙ্কটাম। অন্য নাম হলি বাসিল, বিশেষত হিন্দু সম্প্রদায় গাছটিকে এ নামে ডেকে থাকে। তাদের কাছে গাছটি ধর্মীয় উপাসনার অনুষঙ্গ। হিন্দু পরিবারগুলো তাদের ঘরের সামনে ফুলের টবে এ গাছটির রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে। তাদের প্রার্থনার সময় তুলসীপাতা ব্যবহৃত হয় দেবতার উদ্দেশে। প্রসাদ হিসেবেও তারা তুলসীপাতা ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু তাই বলে এটা হিন্দুদের গাছ এমন মনে করার কোনো কারণ নেই। সব ধরনের মানুষের কাছেই এর গ্রহণযোগ্যতা অনেক।
এই তুলসীর আছে নানান রকম ঔষধি ব্যবহার। নানান রকম রোগ বালাইয়ের ঘরোয়া
চিকিৎসায় ব্যবহার করা সম্ভব এই তুলসী। বর্ণনা করার চেষ্টা করা হলো এমনই
কয়েকটি গুনাগুণ।
- তুলসীপাতা স্নায়ুটনিক এবং স্মৃতিবর্ধক হিসেবে পরিচিত। ফুসফুসের শ্লেষ্মা নিঃসরণে তুলসীপাতার রস অতুলনীয়। পাকস্থলীর শক্তি বর্ধনেও তা অনন্য।
- তুলসীর বীজ গায়ের চামড়াকে মসৃণ রাখে। বীজ সেবনে প্রস্রাবের মাত্রা বেড়ে থাকে।
- বিভিন্ন প্রকার জ্বরে তুলসীপাতার রসের ব্যবহার অনেকটা শাস্ত্রীয় বিষয় হিসেবে পরিচিত। বিশেষত ঋতু পরিবর্তন হেতু যে জ্বর, ম্যালেরিয়া জ্বর এবং ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসায় এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে সমাজে। এর জন্য কচি তুলসীপাতা চায়ের সাথে সেদ্ধ করে পান করলে ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধ হয়ে থাকে।
- একিউট জ্বরে তুলসীপাতার সেদ্ধ রসের সাথে এলাচিগুঁড়া এবং চিনি ও দুধ মিশিয়ে পান করলে দ্রুত উপকার পাওয়া যায়। গলক্ষতের জন্য তুলসীপাতা সেদ্ধ পানি পান করলে এবং গারগল করলে ভালো উপকার পাওয়া যায়।
- তুলসী পাতার ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে ফুসফুসীয় সমস্যায়। ব্রঙ্কাইটিস, অ্যাজমা, ইনফ্লুয়েঞ্জা, কাশি এবং ঠাণ্ডাজনিত রোগে তুলসী পাতার রস, মধু ও আদা মিশিয়ে পান করলে উপশম পাওয়া যায়। ইনফ্লুয়েঞ্জা হলে তুলসী পাতার রস, লবণ ও লবঙ্গ মিশিয়ে পান করলে ফল পাওয়া যায়। এ ধরনের রোগের ব্যবহারের জন্য তুলসী পাতা আধা লিটার পানিতে সেদ্ধ করতে হয় ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষন তা অর্ধেকে পরিণত হয়।
- কিডনির পাথরে তুলসীর ব্যবহার চমকপ্রদ ফলাফল দিয়ে থাকে। তুলসীপাতার রস মধুর সাথে মিশিয়ে নিয়মিত একাধারে ছয় মাস পর্যন্ত ব্যবহারে কিডনির পাথর অপসারিত হয়ে থাকে। এ ছাড়া তুলসী কিডনিকে শক্তিশালী করে থাকে। হৃদরোগেও তুলসীর ব্যবহার রয়েছে। কোলেস্টেরল বৃদ্ধিজনিত হৃদরোগে তুলসীপাতার রস খুব উপকারী। এমনকি কোলেস্টেরলের মাত্রাও কমিয়ে দেয় তুলসী। ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তের শর্করার মাত্রাও কমিয়ে দেয় তুলসীর রস।
- তুলসীপাতার রস শিশুদের জন্য বেশ উপকারী। বিশেষত শিশুদের ঠাণ্ডা লাগা, জ্বর হওয়া, কাশি লাগা, ডায়রিয়া ও বমির জন্য তুলসীপাতার রস ভালো কাজ করে। জলবসন্তের পুঁজ শুকাতেও তুলসীপাতা ব্যবহৃত হয়।
- মানসিক চাপে অ্যান্টিস্ট্রেস এজেন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, মানসিক অবসাদ প্রশমনে এমনকি প্রতিরোধে তুলসী চমৎকার কাজ করে। কোনো সুস্থ ব্যক্তি যদি প্রতিদিন অন্তত ১২টি তুলসীপাতা দিনে দু’বার নিয়মিত চিবাতে পারেন তাহলে সেই ব্যক্তি কখনো মানসিক অবসাদে আক্রান্ত হবেন না বলে গবেষকরা জানিয়েছেন।
- মুখের ঘা শুকাতেও তুলসীপাতা ভালো কাজ করে। মুখের ইনফেকশন দূর করতে তুলসীপাতা অতুলনীয়। প্রতিদিন কিছু পাতা (দিনে দুবার) নিয়মিত চিবালে মুখের সংক্রমণ রোধ করা যেতে পারে। চর্মরোগে তুলসীপাতার রস উপকারী। দাউদ এবং অন্যান্য চুলকানিতে তুলসীপাতার রস মালিশ করলে ফল পাওয়া যায়। ন্যাচার অ্যাথিতে শ্বেতীরোগের চিকিৎসায় তুলসীপাতার ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে।
- চোখের ক্ষতে এবং রাতকানা রোগে নিয়মিত তুলসীপাতার রস ড্রপ হিসেবে ব্যবহারে ফল পাওয়া যায়। দাঁতের সুরক্ষায় তুলসীপাতা শুকিয়ে গুঁড়া করে দাঁত মাজলে দাঁত ভালো থাকে। এ ছাড়া সরিষার তেলের সাথে তুলসীপাতার গুঁড়া মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে দাঁত মাজলেও দাঁত শক্ত থাকে। মুখের দুর্গন্ধ রোধে তুলসীপাতার মাজন ভালো ফল দিয়ে থাকে।
- মাথাব্যথায় তুলসীপাতার পেস্ট কপালে ব্যবহার করলে ফল পাওয়া যায়। এ ছাড়া গনোরিয়া ও গাউট রোগেও তুলসীপাতার রস উপকারী। তুলসীপাতার ব্যবহার ছাড়া তুলসী বীজও ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ডায়রিয়া, পুরনো আমাশয়, কোষ্ঠবদ্ধতা, পাইলস, গনোরিয়া কাশি, কিডনি সমস্যা এবং জ্বরে তুলসী বীজ উপকারী।
- হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় তুলসী থেকে তৈরি ওষুধটির নাম ওসিমাস স্যাঙ্কটাম, অ্যাজমা, ঠাণ্ডা লাগা, কাশি হওয়া, জ্বর প্রভৃতিতে এর প্রধান ব্যবহার, মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত এবং স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়ায় এর চমৎকার ব্যবহার রয়েছে। গলাব্যথা, বুকে ব্যথা, মাথাব্যথা, চোখ ব্যথা, কান ব্যথার লক্ষণেও এটা ব্যবহৃত হয়ে থাকে। মুখের ক্ষত, মুখের দুর্গন্ধ, পেট ফাঁপা, ক্ষুধামান্দ্য, লিভারে ব্যথা প্রভৃতিতে এর ব্যবহার রয়েছে।
- ইনফ্লুয়েঞ্জার জন্য হোমিওপ্যাথিতে এর ব্যবহার রয়েছে। টাইফয়েড জ্বরেও এর নিয়মিত ব্যবহার রয়েছে। হোমিওপ্যাথিতে ডায়রিয়া, আমাশয়, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া এবং বারবার প্রস্রাবের চিকিৎসায়ও এটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।